সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
জাতীয় সংসদ
সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল)। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠেয় এই বিশেষ অধিবেশন (একাদশ সংসদের ২২তম) চার কার্যদিবসের মতো চলতে পারে। বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এছাড়া ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব এনে তা গ্রহণ করা হবে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রমসহ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের নেওয়া বছরব্যাপী কর্মসূচি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয় উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘১৯৭৩ সালের ওই দিন সংসদের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে আমরা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এ কারণে ৭ এপ্রিল সংসদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন একাদশ জাতীয় সংসদ চলমান। এটা অনেক গৌরবের বিষয়। আমাদের সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এবং স্পিকারও একজন নারী। যেটা দশমের কিছু অংশসহ, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।’
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কার্যক্রম তুলে ধরে স্পিকার বলেন, ‘৫০ বছরের এই বিশেষ সময়টিকে উদযাপনের জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তারমধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে— একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। ৬ এপ্রিল থেকে অধিবেশন শুরু হবে এবং ঠিক ওইদিন ৭ এপ্রিল বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম হবে। সেখানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আসবেন। তিনি স্মারক বক্তৃতা দেবেন।’
স্পিকার বলেন, ‘পরবর্তী অংশে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব তুলবেন। প্রধানমন্ত্রী সেটি উত্থাপন ও বক্তব্য রাখার পর সব সদস্য এই আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আলোচনায় আমরা প্রবীণ সদস্য বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের সংসদের সদস্যদের অভিজ্ঞতা শুনবো। ৮ এপ্রিল আলোচনা শুরু হয়ে ৯ এপ্রিল তা সমাপ্তির দিকে যাবে এবং প্রস্তাব সাধারণ সর্বসন্মতক্রমে গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্তির দিকে যাবে। আমরা বিশেষ অধিবেশনের একটি খসড়া কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এর সবকিছু চূড়ান্ত হবে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে।’
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ এপ্রিল শুক্রবার ছাড়া সংসদের বৈঠক সকালেই অনুষ্ঠিত হবে। ৬ এপ্রিল সকালে সংসদের বৈঠক শুরু হলে ওইদিন শোকপ্রস্তাবসহ নিয়মিত কার্যসূচির মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হবে। পরদিন ৭ এপ্রিল শুক্রবার শুরু হবে বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম। এদিন বৈঠক বসবে বিকালে। এ দিনের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এছাড়া সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মারক ডাকটিকিট উন্মুক্ত করবেন। পরদিন ৮ এপ্রিল সকালে বৈঠক শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব তুলে সেটার ওপর বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হলে অন্য সদস্যদের আলোচনার সুযোগ দেওয়া হবে। জানা গেছে, ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিন আলোচনা শেষে সাধারণ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে। তবে, এর মধ্যে আগ্রহী সব এমপিকে আলোচনার সুযোগ দেওয়া না গেলে আরও একদিন সময় বাড়ানো হতে পারে।
স্পিকার জানিয়েছেন, বিশেষ অধিবেশনের আলোচনাগেুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তা একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর আগে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে যে বিশেষ অধিবেশন হয়েছিল, সেই আলোচনাগুলোকেও বই আকারে ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ৬ এপ্রিল কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন।
বিশেষ অধিবেশন ছাড়াও বছরব্যাপী কিছু কিছু অনুষ্ঠান থাকবে বলে জানান ড. শিরীন শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবীণ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক একটি মতবিনিময়ের চিন্তা করছি। সিনিয়র সংসদ সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা সেখানে শেয়ার করবেন। বর্তমানের তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন থাকলে সেটা করবেন। আমরা আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনও করতে চাই। সেটা হয়তো বাজেট সেশনের পরে হবে। সেখানে আমরা অন্যান্য দেশের কিছু স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাবো। সেটি সুবর্ণজয়ন্তী পালনের অংশ হবে বলে আশা করছি। সেটা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হয়তো হবে।’
এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ওই বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মারক বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ওই দিনই জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে সংসদে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রস্তাব নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতাসহ সরকারি ও বিরোধী দলীয় ৭৯ জন সংসদ সদস্য ১৯ ঘণ্টা ৩ মিনিট আলোচনা করেন। পরে তা সর্বসম্মতক্রমে গ্রহণ করা হয়।