ছাত্রীহলে গণরুম, চার কক্ষে তিন শতাধিক ছাত্রীর গাদাগাদি বসবাস
সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
বেড, চেয়ার ও টেবিল নেই। থাকছেন মেঝেতে তোশক বিছিয়ে। রশি টানিয়ে রাখছেন জামা-কাপড়। প্রতিটি বিছানার মাঝের ফাঁকা স্থানে রাখছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফলে চলাফেরা, ঘুম, খাওয়া ও পড়াশোনা সবই করতে হয় মেঝেতে। এভাবে হলের ডাইনিং ও টিভি রুমে তিন শতাধিক ছাত্রীকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তাদের রান্না করতে গিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হয়। নিত্য বিড়ম্বনা আছে শৌচাগার নিয়েও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া হলের গণরুমের চিত্র এমনই।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের টিভি রুমে দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) ৯৫ জন ছাত্রী ও ডাইনিংয়ে প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) শতাধিক ছাত্রী অবস্থান করছেন। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া হলের টিভি রুমে প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) ৯০ থেকে ৯৫ জন ছাত্রী অবস্থান করছেন। আর অন্য একটি রুমে দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) প্রায় অর্ধশত ছাত্রী অবস্থান করছেন। এছাড়া হলের কমনরুম, রিডিং রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুমেও গাদাগাদি করে থাকছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন কারণে ছাত্রীদের হলগুলোতেও গণরুম সৃষ্টি হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া হলের তুলনায় অন্য হলগুলোতে সংকট কিছুটা কম।
গণরুমের ছাত্রীরা জানান, হলে জায়গার তুলনায় শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। এতে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া শৌচাগার সংকট, রান্না করতে ভোগান্তি, সিনিয়রদের দৌরাত্ম্য, পোকামাকড়ের উপদ্রব, দুর্বল ওয়াই-ফাই ও ডাইনিংয়ের পুষ্টিহীন খাবারসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন তারা।
ছাত্রীদের সমস্যার কথা স্বীকার করে বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শারমীন সুলতানা বলেন, ‘হলের গণরুমে ছাত্রীদের কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে। তবে হলে একটাও সিট ফাঁকা নেই, তাই বাধ্য হয়ে তাদের গণরুমেই রাখতে হচ্ছে। আমরা সিট সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রীদের সকল সমস্যার সমাধান হবে।’ একই কথা বলেছেন, শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসনে আরা।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রীরা গণরুমে থাকছে, তা সত্যি। হলের সিট ফাঁকা না হতেই আবার নবীন ছাত্রীদের বরাদ্দ দেওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এমনকি তৃতীয় বর্ষের অনেক ছাত্রী মিনি গণরুমে থাকছেন। আমরা সিট সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।’
এদিকে গত রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীরা।
এর আগে, রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন তারা। পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর রাত ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ছাত্রীদের অবস্থানস্থলে আসেন।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘নতুন হলগুলো চালু করতে পারলে গণরুম সংকট থাকবে না। কিন্তু লোকবল সংকটে নতুন হলগুলো চালু করতে পারছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) লোকবল নিয়োগের জন্য অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে আগামী ২৭ জুলাই ইউজিসিতে যাব, সেখানে হলের সিট সংকটের বিষয়ে আলোচনা করব। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আসন সংকট সমাধান হবে।’