সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদক
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ফাইল ছবি
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকেরা অতীতের চেয়ে এবার অনেক আগে থেকেই সক্রিয়।
সোমবার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
বাংলাদেশ অতীত নির্বাচনের তুলনায় এবার বিদেশিদের দৃষ্টিভঙ্গি বা চাওয়া-পাওয়ায় কোনো পরিবর্তন দেখছেন কি না – সাংবাদিকরা জানতে চান শাহরিয়ার আলমের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনো পরিবর্তন দেখছি না। এটা তারা (বিদেশিরা) বলতে পারবেন, তাদের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনের আগে তাদের এতোটা অ্যাক্টিভ দেখিনি, যতটা তারা এবার অনেক দিন আগে থেকে অ্যাকটিভ হয়েছেন। এটার উদ্দেশ্য ও কারণ তারা (বিদেশিরা) বলতে পারবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে কে আসল না আসল না, এটা কোনো বিষয় না। আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে পেরেছি কি না, সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি কি নাৃতবে পরিস্কারভাবে বলি, কে নির্বাচনে এলো, কে এলো না; এটা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বা গণতন্ত্র গ্রহণযোগ্যতার নিয়ামক উপাদান নয়। কারণ পৃথিবীতে এ রকম রাষ্ট্র নিকট অতীতে ছিল, আছে। এ গ্রুপগুলোর মধ্যে কোনো অপজিশন ছিল না সংসদে। আমাদেরও কোনো বিরোধী ছিল না। পরে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বের হয়ে বিরোধী দল হলো।
গত ১৭ জুলাই ঢাকার উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তবে সেই হামলাকে তিনি নির্বাচনী সহিংসতা বলতে নারাজ। তাঁর মতে, এটি নির্বাচন শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগে হয়েছে এবং এটি নির্বাচনের ফলাফলকে কোনোভাবে প্রভাবিত করেনি।
হিরো আলমের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ১৩ রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বিবৃতিতে ভিয়েনা সনদের লঙ্ঘন হয়েছে এবং সরকার ওই দেশগুলোকে বিষয়টি জানিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন কংগ্রেস সদস্য জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে লেখা এক চিঠিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। এর আগেও একাধিক কংগ্রেস সদস্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চিঠিগুলোকে সরকার ‘গুরুত্ব দিচ্ছে না’ বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা বা কংগ্রেসম্যানরা লিখছেন। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে আমাদের খুবই গঠনমূলক বৈঠক হয়েছে বেশ কয়েকটি। সম্প্রতি যে সফরগুলো হয়েছে, তাদের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি ও যে অগ্রগতি হয়েছে…এবং সেগুলোয় তাঁরা প্রশংসা করেছে। আমরা খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলাম যে এ ধরনের যোগাযোগ থাকলে সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।’
তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগে যেটি করতাম না, এখন করছি। সেটি হচ্ছে, আমাদের দূতাবাস ওই কংগ্রেসম্যান বা সিনেটর বা রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এই যোগাযোগের ফলে বের হয়ে এসেছে, একজন বলেছেন আমি তো সই করিনি, কিন্তু আমাকে সই করতে বলেছিল। আরেকজন বলেছেন, আমি তো আংশিক দেখে আমার স্টাফদের দেখতে বলেছি।’
আরেকটা ১/১১ আশঙ্কা বা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা কথা বলা হচ্ছে- এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল হিসেবে বর্তমান নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এক জায়গায়। আওয়ামী লীগের বাইরে বঙ্গবন্ধুকন্যার ভিত এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে, অন্য সরকারের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এখানে আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করিনি। ওটা (১/১১) বিএনপির নিজস্ব চোরাবালির ফাঁদ ছিল। ১/১১ বিএনপি ডেকে নিয়ে এসেছে। তারা যতটা পেরেছে স্ক্র্যাচ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সংজ্ঞা পরিবর্তন করেছে, বয়স পাল্টাচ্ছে, তাদের রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করেছে। এ রকম লিডারশিপ এখন নেই। আমি মনে করি না এখন এ রকম কিছু হওয়ার সম্ভবনা আছে।