সাকিব-তামিমের গল্পটা যেন বিরানব্বইয়ের ইমরান-মিঁয়াদাদের সঙ্গে মিলে যায়!

খেলাধুলা

স্পোর্টস ডেস্ক

তামিম ইকবাল

দেশের ক্রিকেটটাকেই যেন বদলে দিতে এসেছিলেন ২০০৭ সালে ছিপছিপে গড়নের তামিম ইকবাল।

বিশ্বকাপে ভারতের জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে তামিমের বিশাল ছক্কা মারাটা যেন বাংলাদেশ দলকেই বদলে যাওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছিল।

সেদিনের সেই বিশ্বকাপে আরও এক তরুণ ছিলেন, তিনি সাকিব আল হাসান। তামিমের মতো সেদিন অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন তিনিও। দুজনেই ছিলেন বন্ধু। তবে দিনে দিনে সেই বন্ধুত্বে মরিচা ধরেছে। সম্পর্কের জল গড়িয়েছে ভিন্ন দিকে।

২০২৩ বিশ্বকাপ হতে পারত তামিম-সাকিবের পঞ্চম বিশ্বকাপ। তবে তামিম খেলছেন না। সাকিব আজ অধিনায়ক। পুরো ফিট না থাকা তামিম ইকবালকে নাকি বিশ্বকাপে নিতে অসম্মতি জানিয়েছেন সাকিব নিজেই!

তাদের দুজনের এমন অবস্থান মনে করিয়ে দিচ্ছে তিন দশক আগের এক স্মৃতি। সেবারও এমনই এক কাহিনি দেখেছিল ক্রিকেটবিশ্ব।

আশির দশকের পাকিস্তান ক্রিকেটবিশ্বের দরবারে ছিল দাপুটে এক নাম। আর সেই দাপটের কেন্দ্রে যে কজন ছিলেন তাদের মধ্যে দুজন ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ।

একজন লাহোরের সন্তান। অক্সফোর্ডে পড়ুয়া, চলনে-বলনে নায়কের চেয়ে কম নন। তিনি ইমরান খান। দ্য গ্রেট ইমরান। পাকিস্তান ক্রিকেটে যার জুড়ি মেলা ভার।

অপরজন জাভেদ মিয়াঁদাদ। করাচির ছেলে। আর দশজন পাকিস্তানি ছেলের মতোই রাস্তার ধারে ক্রিকেট খেলে শৈশব পার করেছেন। নিজের গুণে হয়ে উঠেছেন পাকিস্তান এবং বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম। এতটাই বড়, তার নামই হয়ে গেল বড়ে মিয়া।

ইমরান ও মিয়াঁদাদের মাঠের বাইরের সম্পর্কটা অবশ্য খুব একটা ভালো ছিল না। ইমরান দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে না পেরে অবসরেই চলে যান। সাল তখন ১৯৮৭। তার পরিবর্তে অধিনায়ক দরকার। সেই অধিনায়ক হলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

কিন্তু ‘৯২ বিশ্বকাপের আগে মিয়াঁদাদের ব্যাটে প্রবল রানখরা। সেই সঙ্গে হানা দিয়েছে কোমরের ইনজুরি। ঠিক যেমনটা আজকের তামিম ইকবালের জন্য প্রযোজ্য। এদিকে প্রেসিডেন্টের অনুরোধে বিশ্বকাপের ঠিক আগে অবসর ভেঙে মাঠে ফেরেন ইমরান খান। ফিরেই অধিনায়ক বনে যান তিনি।

ইমরানও সেবার মিয়াঁদাদকে বিশ্বকাপে নিতে চাননি। এমনকি তাকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিয়েছিল দল।

তামিমের মতো করেই বিশ্বকাপ দল থেকে শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়েন পাকিস্তানের সেই সময়ের সেরা ব্যাটার। তবে ইমরানের সেই সাহসী সিদ্ধান্ত কাজে লাগেনি।
দলে যোগ্য পারফর্মার না থাকায় ব্যাপক ভরাডুবি হয় পাকিস্তানের। এর পরেই মিয়াঁদাদকে ফেরাতে বাধ্য হন অধিনায়ক ইমরান। মিয়াঁদাদ পাকিস্তান থেকে উড়াল দেন অস্ট্রেলিয়ায়।

এর পরের গল্পটা সবারই জানা। মিয়াঁদাদ আর ইমরান মিলে বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তানকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেন। বড়ে মিয়া সেই বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচেই রানের বন্যা বসিয়ে দিয়েছিলেন। ৫ ইনিংসে ছিল অর্ধশতক। রান তুলেছিলেন ৬২-এর ওপর গড় রেখে। পুরো টুর্নামেন্টে ছিল ৪৩৭ রান, যা ছিল সেই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।

এমনকি বিশ্বকাপ ফাইনালে ২৪ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে টেনে তুলেছিলেন এই দুজনেই। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে ১৩৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন।

তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেই চিত্রের অনেকখানিই এখন মিলে যায়। জাভেদের মতোই কোমরের চোটে আক্রান্ত তামিম। তামিম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক।

অধিনায়ক ইমরানের মতোই সাকিবও চাননি কোনো অর্ধেক ফিট খেলোয়াড় দলে থাকুক। বুধবার বিকাল ৪টার ফ্লাইটে তামিম থাকবেন না মিয়াঁদাদের মতো। সেটিও নিশ্চিত।

বাকি চিত্রনাট্য কী এক হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলা যায় না। তবে সাকিব আর তামিম মিলে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জেতাচ্ছেন এমন কিছুর স্বপ্ন হয়তো সব বাংলাদেশিই দেখতে চাইবেন। তামিম কী পারবেন বিরানব্বইয়ের সেই জাভেদ মিঁয়াদাদ হতে? প্রকৃতি তাকে সেই সুযোগ হয়তো দেবে না। তবে এমন স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *