শান্ত এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি

খেলাধুলা

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

সময়টা ২০০৮ সাল। প্রতিবেশী এক শিশুর সঙ্গে বাড়ির সামনের রাস্তায় ক্রিকেট খেলছিল দশ বছর বয়সি নাজমুল হোসেন শান্ত।

ঠিক তখনই এক ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বাবা জাহাঙ্গীর আলম রতনের কাছে গিয়েছিলেন রাজশাহীর ভলিবল খেলোয়াড় মুন্নু। ছোট্ট শান্তর ব্যাটিং দেখে মুন্নু এতটাই মুগ্ধ হন যে, ওই দিনই তাকে রাজশাহী ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

তবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না শান্তর বাবা। কারণ একেতো গ্রামের মানুষ, তার ওপর একাডেমির দূরত্বও বাড়ি থেকে ২০ কিলেমিটার। তবে মুন্নু ছিলেন নাছোড়বান্দা। বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে রাজি করিয়ে শান্তকে সেদিনই ভর্তি করান রাজশাহী ক্রিকেট একাডেমিতে।

সেই থেকে শুরু রাজশাহীর পবা উপজেলার রণহাট গ্রামে জন্ম নেওয়া শান্তর ক্রিকেটার হওয়ার পথচলা। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ স্বপ্নসারথির একজন শান্ত। সাম্প্রতিক ফর্মের কারণে বিশ্বকাপে শান্তর ব্যাটে দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।

ভলিবল খেলোয়াড় মুন্নু শান্তকে রাজশাহী ক্রিকেট একাডেমিতে কোচ জামিলুর রহমান সাদের হাতে তুলে দেন। তবে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে সাদ শান্তর কোচিংয়ের দায়িত্ব দেন কোচ গোলাম রাব্বানী হিমেল এবং রফিকুল ইসলামকে। তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণেই শাণিত হতে থাকেন আজকের নাজমুল হোসেন শান্ত।

প্রথমে ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন শান্ত। পরে ২০১২ সালে জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে বিকেএসপিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতেও খেলেন। সেখানে নির্বাচকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে অনূর্ধ্ব-১৫ এর হয়ে ভারতে খেলতে যান। ওই টুর্নামেন্টে শতরানও করেন। পরে ২০১৫ সালে বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে দুই ম্যাচের একটিতে ডাবল সেঞ্চুরি ও অন্যটিতে ১৯৬ রান করেন শান্ত। পরের বছর খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে।

২০১৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) অভিষেক হয় শান্তর। পরের বছর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ঢাকা মেট্রোপলিসের বিপরীতে রাজশাহী বিভাগের হয়ে মিজানুর রহমানকে নিয়ে করেন রেকর্ড ৩৪১ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা রান সংগ্রহকারী।

২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় শান্তর। পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-২০-তে অভিষেক হয় তার। জাতীয় দলের হয়ে শান্ত ২৩ টেস্টে ১২৮৩, ৩১ ওয়ানডেতে ৯৬৭ এবং ২৫ টি-টোয়েন্টিতে ৫৬৬ রান করেছেন।

বাবা জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, খেলাধুলা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। শান্ত যখন ছোট তখন আমাদের গ্রামটি ছিল একেবারে নিভৃত পল্লি। ছিল না রাস্তাঘাট। আমার ১০ বছর বয়সি ছেলেটা ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে একাডেমিতে যাতায়াত করত। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্কুল, তারপর একাডেমি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরত। ছোট থেকেই শান্ত ছিল বুদ্ধিদ্দীপ্ত, ছিল প্রচণ্ড শৃঙ্খলাবোধ। ওই সময় থেকেই আমি ওর মধ্যে বড় কিছু হবার স্বপ্ন দেখেছিলাম।

শান্তর কোচ গোলাম রাব্বানী হিমেল বলেন, প্রথমেই ওর অসাধারণ ব্যাটিং প্রতিভা চোখে পড়ে। ওই সময়েই আমাদের বিশ্বাস ছিল শান্ত টপ লেভেলে খেলবে। আরেক কোচ রফিকুল ইসলাম বলেন, শান্ত ছিল খুবই পরিশ্রমী এবং সবার থেকে আলাদা। সব সময় তার শেখার আগ্রহ ছিল। অনেক সীমাবদ্ধতা তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। নিজেকে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যে কমিটমেন্ট লাগে, তা ওর ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *