সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত, পাশাপাশি মন্দির-মসজিদ

জাতীয় ধর্ম ও দর্শন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

লালমনিরহাট জেলা শহরের কালিবাড়ি এলাকায় একই উঠানে শতবর্ষী মসজিদ-মন্দির।

সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহা অষ্টমী। তাই দিনভর চলেছে উলু ধ্বনি, ঢোল ও সঙ্খ বাজনার তালে তালে পূজা অর্চনা। কিন্তু হঠাৎ মসজিদের মাইকে ধ্বনিত হলো পবিত্র জোহরের নামাজের আজান। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল ঢোলের বাজনা ও পূজা অর্চনা।

রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুর ১টায় লালমনিরহাট জেলা শহরের কালিবাড়ী এলাকায় একই উঠানে শতবর্ষী মসজিদ-মন্দির প্রাঙ্গনে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে; এর যথার্থই প্রমাণ পুরান বাজার জামে মসজিদ ও পুরান বাজার কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

দুর্গাপূজার সময় ঢাক ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিয়ে সমস্যা হয় কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমান ব্যক্তিরা জানান, আমরা মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেই কখন এবং কীভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। নামাজের সময়গুলোতে সকল প্রকার বাদ্য বাজনা বন্ধ রাখা হয়। নামাজ শেষে মসুল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে পূজারিদের জন্য সুযোগ করে দেন। এটাই এখানে নিয়ম।

প্রতিদিন ভোরে ফজরের সময় মোয়াজ্জিমের কণ্ঠে মিষ্টি আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যাওয়ার পরে পাশেই মন্দিরে শোনা যায় উলু ধ্বনি! এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন বহন করছে লালমনিরহাট শহরের শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির।

এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ শিকদার আলী (৮০) জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে একই উঠানে মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব স্ব ধর্ম পালন করে আসছে। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও কোনো বাকবিতণ্ডা পর্যন্ত হয়নি। উভয় ধর্মের শালীনতা বজায় রেখেই একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন স্থানীয়রা। শুধু নামাজ বা পূজা অর্চনাই নয়, উভয় ধর্মের সকল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই পালন করছেন এখানকার মানুষ।’

মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লি গোলাম মোস্তফা (৭৫) জানান, ‘এখানে ধর্ম নিয়ে নেই কোনো হানাহানি ও মতবিরোধ। এখানে পারাস্পারিক সহযোগিতায় ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষরা। ফলে সম্প্রীতির এ স্থানটি দেখতে বিশেষ করে দুর্গাপূজার সময় দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এখানে।’

কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এরপর মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯০০ সালে একটি নামাজ ঘর নির্মিত হয়। এ নামাজ ঘরটিই পরবর্তীতে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে কোনো বিবাদ ও ঝামেলা ছাড়াই সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষজন।’

পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ‘এখানে হিন্দু মুসলমান যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে। উভয় ধর্মের লোকদের সম সুযোগ দিয়েই এখানে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তাই ধর্ম পালনে কারও কোনো সমস্যা হয় না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *