সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ, কারখানা ব্যবস্থাপক আইসিইউতে, গুলিবিদ্ধ ৪

অন্যান্য আইন আদালত শহর

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা ২য় দিনের মতো রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার-আশুলিয়ায় বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় তারা দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে দেয় এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের উপর রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করলে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গুলিবিদ্ধদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- এনভয় গার্মেন্টসের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়া। তবে বাকি আহতদের তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকরা। আন্দোলনে সমর্থন না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হা-মীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশনস লিমিটেড-১ কারখানায় প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় কারখানার ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দিন ও ১ নম্বর গেটের সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নিতাই, কোয়ালিটি ইনচার্জ মো. তাইজুল উদ্দিনসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এর মধ্যে কারখানার ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ম্যানেজার হারুন-অর রশিদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেক্সট কালেকশনস লিমিটেডের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা আসেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জামগড়া এলাকার এনভয় গ্রুপ গার্মেন্টসের আয়রন ম্যান মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার (৩৫) পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন। তাকে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শ্রমিক অসন্তোষের মুখে জামগড়া এলাকার সেতারা, এনভয়, দি রোজ, ভার্চুয়াল, এম ডিজাইন, উইন্ডি, পাইওনিয়ারসহ ছয়তলা এলাকার প্রায় সব পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বেশ কিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

অন্যদিকে একই দাবিতে সাভারের হেমায়েতপুর পদ্মারমোড় এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সড়কে নামলে পুলিশ, বহিরাগতদের সাথে নিয়ে শ্রমিকদের মারধর করা হয়। শ্রমিকদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। বহিরাগতরা প্রকাশ্যে রামদা হাতে খোলা প্রাইভেটকারে এলাকায় টহল দিচ্ছে।

সাভার চামড়া শিল্পনগরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রাসেল হোসেন মোল্লা বলেন, বেতন ভাতার দাবিতে সোমবার সকাল ৮টার দিকে হেমায়েতপুর পদ্মার মোড়ের দীপ্ত অ্যাপারেলস কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। এ সময় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, ব্যাবিলন গ্রুপ ও একেএইচ গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যেও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ও ব্যাবিলন গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানাও ছুটি ঘোষণা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *