পরকীয়ায় বাধা হওয়ায় মামুনকে হত্যা, স্ত্রী-জামাতার যাবজ্জীবন

অন্যান্য মফস্বল

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

লক্ষ্মীপুরে স্ত্রী শাহিনুর বেগম (৩৬) ও জামাতা রাকিব হোসেনের (২৩) পরকীয়ায় বাধা হওয়ায় পান বিক্রেতা জুলফিকার আলী মামুনকে (৪৫) খুন হতে হয়। এ ঘটনায় শাহিনুর ও রাকিবকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

জেলা জজ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এতে আদালত তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত শাহিনুর ভিকটিম জুলফিকার আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং রাকিব ভিকটিমের মেয়ে জামাই ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিবপুর গ্রামের হাবিবুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ভিকটিম মামুন সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামের মৃত সফিউল্যা পাটওয়ারীর ছেলে। তিনি ঢাকা শহরে পান বিক্রেতা ছিলেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিনুর পরপুরুষে আসক্ত ছিলেন। এ নিয়ে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে শাহিনুরের মনোমালিন্য দেখা দেয়। এতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে এসে তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মজুপুর গ্রামের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পার্শ্ববর্তী রাজিবপুর এলাকার বাসিন্দা রাকিবের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্কটি পাকাপোক্ত করতে মামুনের অমতেই ১০ বছরের শিশুকন্যাকে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে দেয় শাহিনুর। ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর মামুন ভাড়া বাসায় আসেন। তখন তিনি শাহিনুর ও রাকিবকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে পথের কাটা হওয়ায় মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। পরে ৯ অক্টোবর রাতে তারা মামুনকে মারধরসহ শ্বাসরোধে হত্যা করে।

এদিকে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে মামুনের লাশ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। মামুনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলে লাশ বিরাহিমপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায় শাহিনুর। পরে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বশিকপুরের পোদ্দারবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মামুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে সত্যতা পাওয়া যায়। ঘটনার ১২ দিন পর ২২ অক্টোবর সদর মডেল থানায় ভিকটিমের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শাহিনুর ও রাকিবসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এতে আরও ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ শাহিনুর ও রাকিবকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে তারা ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বেলায়েত উল্যাহ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তদন্তকালে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি শাহ আহাম্মদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত ১৩ মাসের মাথায় রায় প্রদান করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *