প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে আট চুক্তির সম্ভাবনা

জাতীয়

সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশ সফরে যাচ্ছেন। তাছাড়া রাজনৈতিক নয়, করোনার কারণেই আগের জাপান সফর বাতিল হয়েছিল বলে জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। একাত্তরকে তিনি বলেন, জাপান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে চায়।

জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। সর্বোচ্চ ঋণদাতাও। গেল বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের তারিখ চূড়ান্ত হলেও তা বাতিল হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সে সময় নির্বাচন নিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের কারণে এই সফর বাতিল হয়নি।

সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছেন। সেখানে তিনি ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অবস্থান করবেন।

তার এ সফরে কৃষি, মেট্রোরেল, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডেশন, শিপ রিসাইক্লিংসহ বিভিন্ন খাতের ৮টি চুক্তি বা সহযোগিতা স্মারক সই হবার কথা রয়েছে। এ সফর দু’ দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হবার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় টোকিওতে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। ২৬ এপ্রিল জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

একই দিন সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজের মাধ্যমে শীর্ষ বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

আগামী ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী টোকিওর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। একইদিন জাপানের চারজন নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করবেন।

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাপান প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিকদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরের সময় আরও কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অংশ নেবেন। এছাড়াও জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হবে।

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে তার বোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা সফরসঙ্গী হবেন। এছাড়া ব্যবসায়িদের একটি প্রতিনিধি দলও তার সঙ্গে জাপান যাবেন।

প্রধানমন্ত্রী জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্র যাবেন। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের পার্টনারশিপের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের আমন্ত্রতে সেখানে যাচ্ছেন তিনি।

পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বক্তব্য দেবেন। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়যাত্রা ও গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে। এর আগে ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৌজন্য দেখা করবেন।

২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তাগণ একান্ত বৈঠক করবেন। এর পরেই ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুজানে পি ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন।

একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিসা বিসওয়ালের আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মূলবক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ‘ইকোনমিস্ট’ সংবাদপত্রকে সাক্ষাতকার দেবেন। এরপরে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক আয়োজিত কমিউনিটি ইভেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা’র সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। ৪ মে প্রধামন্ত্রী ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ৫ থেকে ৬ মে লন্ডনে ব্রিটেনের মহামতি রাজা চার্লস এবং কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠিত হবে। এ রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রণের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

এ সফরে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাত করতে পারেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাা প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের একটি হোটেলে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায়ও অংশ নেবেন এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ৯ মে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের চেষ্টা আছে। সব দল শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুদানে সাম্প্রতিক সশন্ত্র সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে ভ্রমণ না করার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জাপান থেকে অস্ত্র কেনার চুক্তি হবে না। তবে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, সভা-সেমিনারের মতো সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *