‘মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি ত্রুটিযুক্ত-একপেশে’

জাতীয় রাজনীতি

সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমি বিবৃতিটি পড়েছি। বিবৃতিতে আগুনসন্ত্রাস করে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো কথা নাই। সেখানে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে, গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে, অথচ গ্রেফতার তো তাদেরই করা হচ্ছে যারা আগুনসন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত।’

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার হাইকমিশনারকে বলব যে, গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে সেটি নিয়ে কিছু বলার জন্য। মানবাধিকার কমিশনের এই বিবৃতি তখনই ঠিক ও গ্রহণযোগ্য হতো, যদি সেখানে নির্বাচনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে যেভাবে সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস চালানো হয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটি নিয়ে বক্তব্য থাকতো এবং সেগুলোর নিন্দা জানানো বা কনডেম করা হতো। কিন্তু তা নেই বলে এই বিবৃতিটি পক্ষপাতদৃষ্ট, অসম্পূর্ণ এবং একপেশে বলে প্রতীয়মান। তাদের আসলে মানবাধিকার নিয়ে এবং গাজায় যেভাবে মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে, সেটি নিয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার।’

নির্বাচন নিয়ে ভারত, চীন, রাশিয়ার তাৎক্ষণিক প্রশংসাতেই হয়তোবা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি একটু অন্যরকম: ‘নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি খানিক নেতিবাচক’- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে সেখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ, সাবেক কংগ্রেসম্যান, সিবিএস নিউজের চিফ নিউজ এডিটর এবং অন্যান্য দেশ তথা জার্মানি, ইইউ পার্লামেন্টের সাবেক মেম্বার সবাই ছিলেন। তারা সবাই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন- নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নির্বাচন সুন্দর হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমরা সবসময় দেখে এসেছি, চীন, রাশিয়া যা বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উল্টোটা বলে। ভারত, চীন, রাশিয়া একযোগে যখন বলেছে, আমাদের নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে, তারা যদি এই অভিনন্দনটা ইতোমধ্যেই না দিতো বা এই অভিমত ব্যক্ত না করতো তাহলে হয়তো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিটা অন্য রকম হতো বলে আমার ধারণা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে এবং বিশ্ব অঙ্গণেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করবে সেটি এই বিবৃতিতেও বলেছে।’

জনগণ ও নির্বাচন কমিশনকে তথ্যমন্ত্রীর ধন্যবাদ: এদিন দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, উৎসবমুখর পরিবেশে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো কোনো জায়গায় ভোট প্রদানের হার ৭০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি, গড়ে ৪১.৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ। আমার এলাকায় ৬৯.৪৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকায় এর চেয়েও বেশি সম্ভবত ৮০ শতাংশ। শহরাঞ্চলে হারটা কিছুটা কম ছিল কারণ শহরের মানুষ জায়গা পরিবর্তন করে, আবার তিন দিন টানা ছুটি পাওয়ার কারণে যেহেতু অন্যরা গ্রামে ভোট দিতে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার জন্য অনেকেই গ্রামে চলে গেছে।’

এ সময় নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা শক্ত হাতে অত্যন্ত কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে, এ জন্য নিঃসন্দেহে তারা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য, ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ইতোপূর্বের নির্বাচনগুলোর সঙ্গে এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেও এবারের নির্বাচন মিলিয়ে দেখা যায় যে, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *