চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
নিহত সজলের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি।
চুয়াডাঙ্গায় কাপড় কিনতে গিয়ে দর কষাকষিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে দুই যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার ভালাইপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আলমসাধু (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি) চালক সজল আহমেদ (২৭) ও একই গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে এনজিও কর্মী মামুন অর রশিদ (২৪)।
জানা যায়, এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতেই চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে ভালাইপুর বাজারের আশরাফুলের দোকানে কাপড় কিনতে গিয়ে দরকষাকষি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় ছামেনা খাতুন নামে এক নারীর। এক পর্যায়ে দোকান থেকে বের করে দেওয়া হয় ওই নারীকে। এ ঘটনায় ছামেনা তার ছেলে টিপুকে জানান। পরে টিপু তার বন্ধু সজল, মামুনুর রহমান ও পলাশকে সঙ্গে নিয়ে ওই দোকানে গিয়ে বিষয়টি জানতে চান। সেখানে মীমাংসা করতে গিয়ে দোকান কর্মচারীর পক্ষে হুচুকপাড়ার গ্রামের আকাশ, সানোয়ার, শান্তি ও জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে টিপুর বন্ধু মামুন ও সজলের ওপর হামলা চালান তারা। এ হামলায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন মামুন ও সজল। পরে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে মামুন ও সজলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ভালাইপুর গ্রামের বাসিন্দা টিপু বলেন, বিকেলে আমার মা ভালাইপুর মোড়ের আশরাফুল গার্মেন্টস ও বস্ত্রালয়ে কাপড় কিনতে যান। কাপড়ের দাম জিজ্ঞাসা করলে ৮২ টাকা বলেন কর্মচারী ইমন। আমার মা ৮০ টাকায় কাপড়টি নিতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে ওই কর্মচারীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। পরে কাপড় পরিমাপের স্কেল দিয়ে আমার মাকে আঘাত করেন ইমন। এমনকি আমার মাকে গালিগালাজ করে দোকান থেকে বের করে দেন তিনি। পরে সবার উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমিসহ আমার বন্ধু মামুন ও সজল ভালাইপুর বাজারে চা পান করতে যাই। এ সময় আলুকদিয়া হুচুকপাড়ার আকাশ (২৩), সানোয়ার (৫৫), শান্তি (৪৫) ও জাহাঙ্গীর (৩৫) নামে কয়েকজন ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাদের জখম করে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান বলেন, সজলের পেটে ধারাল অস্ত্র বা ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। এছাড়া ছুরির আঘাতে মামুনুরের বুক ও ফুসফুস গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও প্রাথমিক চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত সজলের স্ত্রী জেসমিন বলেন, আমার স্বামী খুব ভালো মানুষ ছিল। যারা আমার স্বামীকে খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই।
ভালাইপুর বাজার কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিপু বলেন, কাপড় কেনা নিয়ে মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইজন খুন হয়েছে। আমরা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতেই চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, সদর থানার ওসি মাহব্বুর রহমান, পুলিশ কর্মকর্তা এএইচএম লুৎফুল কবীরসহ র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মানিক ও মিঠুন নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহব্বুর রহমান বলেন, পুলিশের অভিযান চলছে। খুব দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। এক নারী কাপড় কিনতে ভালাইপুরের একটি দোকানে এসেছিলেন। দোকানে কাপড় ক্রয়-বিক্রয় ও ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে দোকান কর্মচারীর কটূক্তির শিকার হন ওই নারী। বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে ছেলে টিপু সুলতানকে জানান। সেখান থেকে লোকজন ভালাইপুর বাজার থেকে কর্মচারীকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। গ্রামের লোকজন বাধা দিলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
অপরদিকে, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।