৭০ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা সেই কুদ্দুস মুন্সি না ফেরার দেশে

অন্যান্য জাতীয় জীবনযাপন মফস্বল

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

প্রায় ৭০ বছর পর মাকে ফিরে পাওয়া রাজশাহীর বাগমারার সেই আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।

বিকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। কুদ্দুস মুন্সির বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ৭০ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা ৮০ বছরের কুদ্দুস মুন্সির গল্পটি গণমাধ্যমে বড় শিরোনাম হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় করা এ ঘটনাটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সমান আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছিল।

কুদ্দুস মুন্সি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের মৃত কালু মুন্সির ছেলে। ১০ বছর বয়সে কুদ্দুস মুন্সি চাচার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীতে ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয়ে যান। এর পর ঘুরতে ঘুরতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামে আশ্রয় পান। বড় হয়ে বিয়ে করে সংসার পাতেন বাগমারাতেই। দীর্ঘ ৭০ বছর স্বজন হারানো কুদ্দুস মুন্সি থেকেছেন বাগমারার বারুইপাড়াতে।

আব্দুল কুদ্দুস মুন্সির ছেলে বাবু হোসেন জানান, তার বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে কিছু দিন ধরেই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে কুদ্দুস মুন্সি মারা যান। এদিন বিকালে পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয় তাকে।

বাবু হোসেন মুন্সি আরও বলেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টের মাধ্যমে তার বাবা স্বজনদের খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। সেই সূত্রে প্রায় ৭০ বছর পর আমার বাবা খুঁজে পান তার শতবর্ষী মা মঙ্গলুন্নেসাকে। এর পর আমার বাবা কয়েকবার তার জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড্ডা গ্রামে গেছেন আমার দাদিকে দেখতে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দাদি মারা গেলে বাবা আর সেখানে যাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গল্পের শুরুটা ৭০ বছর আগে। অনেকটা সিনেমার গল্পের মতোই। চাচার সঙ্গে রাজশাহী বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান ১০ বছর বয়সি আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। এর পর অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু কুদ্দুসের কোনো খোঁজ মেলেনি। কুদ্দুসও ফিরে পাননি স্বজনদের। ফিরতে পারেননি জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজের জন্ম গ্রাম বাড্ডায়। এর পর বড় হলে কুদ্দুস সংসার পাতেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে। আট ছেলেমেয়ের জনক কুদ্দুস স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটালেও গর্ভধারিণী মা ও স্বজনদের ফিরে পাওয়ার জন্য সবসময় ব্যাকুল থাকতেন। মায়ের কথা মনে করে মাঝে মাঝে ডুকরে ডুকরে কাঁদতেন।

এদিকে আলাপ প্রসঙ্গে আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি বারুইপাড়া গ্রামের খান মোহাম্মদ আইয়ুব আলীকে নিজের স্বজনদের হারিয়ে ফেলার গল্পটা করেন। এর পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কুদ্দুহ মুন্সির একটি ভিডিওচিত্র পোস্ট করেন ফেসবুকে। এই পোস্টটি দেখতে পান কুদ্দুসের চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলাম। এর পর তিনি ভিডিওটি দেখান কুদ্দুসের মা মঙ্গলুন্নেসাকে। তিনি দেখেই চিনে ফেলেন ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তার সন্তান কুদ্দুসকে। এর পর কুদ্দুসের খোঁজে রাজশাহীর বাগমারায় যান নাতি শফিকুল ইসলামসহ স্বজনরা। তারা কুদ্দুসকে ভিডিওকলে কথা বলিয়ে দেন মায়ের সঙ্গে।

এদিকে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কুদ্দুস ৭০ বছর পর ফেরেন নিজের গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজ জন্মভিটায়। ফেরেন মায়ের কোলে। তবে কুদ্দুস মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান রাজশাহীর বাগমারায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে।

বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামের খান মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, একটি ভিডিও পোস্টের সূত্রে কুদ্দুস মুন্সি ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মা ও স্বজনদের ফিরে পান। সেই আব্দুল কুদ্দুস মুন্সির মুত্যুতে আমি শোকাহত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *