কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড, সংগঠনটির প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষীসহ তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের মো. নুরের ছেলে আবুল হাসিম (৩১), ১২ নম্বর ক্যাম্পের আলী আহমেদের ছেলে হোসেন জোহার ওরফে আলী জোহার (৩২) ও ৬ নম্বর ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে মো. আলম ওরফে শায়ের মুছা (৩৫)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, বুধবার মধ্যরাতে উখিয়ার ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় দুটি বিদেশি অস্ত্র, একটি দেশি অস্ত্র ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, আবুল হাসিম আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সেকেন্ড ইন কমান্ড, মো. আলম আরসা প্রধান আতাউল্লাহর দেহরক্ষী এবং আলী জোহার আরসার পরিবহণ শাখার কমান্ডার। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, গোপনে খবর পাওয়া যায় কয়েকজন আরসা সদস্য ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ঘরে আছেন। এ খবরে বুধবার মধ্যরাতে র্যাব-১৫ এর একটি দল বিশেষ অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আরসার তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার এবং অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।
তাদের মধ্যে আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। ২০১৮ সালে আরসায় যোগ দেন। ২০২০-২২ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ব্লক জিম্মাদার। তার নেতৃত্বে ৪ নম্বর ক্যাম্প ও বর্ধিত অংশে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নতুন ঘাঁটি হয়।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক জানান, হোসেন জোহার ওরফে আলী জোহার মিয়ানমারে থাকার সময়ই আরসার সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ঢুকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আরসার পুরনো সদস্যদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের প্রথম দিকে মৌলভী লাল মোহাম্মদ ও মুফতি আতিকের সহযোগী হিসেবে আরসার আদালতে বিচার কাজ করতেন। ২০২২ সালে এক হত্যাকাণ্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিয়ানমার চলে গেলে হোসেন পরিবহণ শাখার কমান্ডারের দায়িত্ব পান। উখিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে।
র্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা ২০১৬ সালে মিয়ানমার থাকতেই আরসায় যোগ দেন। তিনি প্রথমে পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। পরে আরসা নেতাদের মোটরসাইকেলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহর দেহরক্ষীর দায়িত্ব পান। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় পাঁচটি মামলা আছে।
বুধবারের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে জানিয়ে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এক বছরে র্যাব-১৫ আরসার ১০১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে সাতটি বিদেশি পিস্তল, ৫২টি দেশি অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি, ৬৭ রাউন্ড গুলির খোসা, ৫০.২১ কেজি বিস্ফোরক ও ২৮টি ককটেল।