নড়াইলে ভাষাশহীদদের স্মরণ: সন্ধ্যা নামতেই জ্বলে উঠল লাখো মোমবাতি

জাতীয় রাজনীতি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

সুবর্ণবাঙলা প্রতিনিধি

লাখো মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ

মায়ের ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে পাকিস্তানি শাসকদের বুলেটের সামনে প্রাণ দানকারী সূর্যসন্তানদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করল নড়াইলের মানুষ। বুধবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গেই নড়াইল শহরের কুরিরডোব মাঠে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোমবাতি প্রজ্বালনের কাজ শুরু করে। ৬টা ২০ মিনিটে গোটা মাঠে জ্বলে ওঠে লাখো মোমবাতি। এর পরই উঁচু মঞ্চে বেজে ওঠে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের শিল্পীদের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’ সংগীত। পরে একে একে শিল্পীরা ১২টি গণসংগীত পরিবেশন করেন। এতে নেতৃত্ব দেন সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিটু।

মাঠের মাঝখানে উঁচু ঢিবিতে কাঠের শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে মোমবাতি জ্বালানো হয়। চারপাশে হ্রদের মতো পানির ব্যবস্থা করা হয়। দৃশ্যটি ছিল নয়নাভিরাম। মাটির প্রদীপ, ককসিট ও কলা গাছের গুঁড়িতে মোমবাতি জ্বালিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পানির মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় জ্বালানো হয় লাইট। মাঠজুড়ে ছিল বাংলা বর্ণমালা, আল্পনা, বাংলার চিরায়ত বিভিন্ন লোকশিল্পের নিদর্শন।

একুশের আলো নড়াইলের আয়োজনে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আশফাকুল হক চৌধুরী। একুশের আলো উদযাপন পর্ষদের সহসভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু, একুশের আলোর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মলয় কুণ্ডু প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ভাষাশহীদরা যে ত্যাগের দীপ্ত শিখা জ্বালিয়ে গেছেন, তা পৃথিবীর সব অন্ধকার দূর করে দিক। বন্ধ হোক দেশে দেশে যুদ্ধ, সন্ত্রাস, হানাহানি, দুর্নীতি, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। উজ্জ্বল হয়ে উঠুক সমগ্র পৃথিবী।

লাখো মোমবাতি প্রজ্বালন অনুষ্ঠান নড়াইলের ভাষাসংগ্রামী প্রয়াত রিজিয়া খাতুনের নামে উৎসর্গ করা হয়। নড়াইল ও অন্যান্য জেলা থেকে আসা কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। নিরাপত্তায় ছিলেন তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *