সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
ছবি: রয়টার্স
পশ্চিমাদের পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে সেনা পাঠায় তবে তা হবে যুদ্ধের জন্য উস্কানি।
কতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র আছে রাশিয়ার
উত্তরাধিকারসূত্রে সোভিয়েত আমলের পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ায় রাশিয়ার কাছে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক ওয়ারহেড।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের (এফএএস) মতে, পুতিন প্রায় ৫ হাজার ৫৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ স্থগিত আছে তবে বেশিরভাগই অক্ষত। এছাড়ও প্রায় ৪ হাজার ৩৮০টি দীর্ঘপাল্লার ও স্বল্প-পরিসরের কৌশলগত অস্ত্র রয়েছে যা পারমাণবিক শক্তি দিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
এফএএসের মতে, মজুদকৃত ওয়ারহেডগুলার মধ্যে ১ হাজার ৭১০টি কৌশলগত ওয়ারহেড মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৭০টি স্থল-ভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ৬৪০টি সাবমেরিন-লঞ্চ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে ও সম্ভবত ২০০টি ভারী বোমারু ঘাঁটিতে মোতায়েন করা আছে।
এই সংখ্যার মানে হলো, এর মাধ্যমে মস্কো বিশ্বকে বহুবার ধ্বংস করতে পারবে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিল প্রায় ৩০ হাজার।
কোন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হবে
রাশিয়ার প্রকাশিত ২০২০ পারমাণবিক মতবাদ অনুসারে, শর্তের অধীনে একজন রুশ প্রেসিডেন্ট একটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করতে পারবেন। বিশেষ করে পারমাণবিক বা অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করে যদি রাশিয়ার ওপর কোনো আক্রমণ করা হয় শুধু তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এটি ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ রাশিয়ার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে।
রাশিয়া কি আরও পরমাণু অস্ত্র পাবে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ২০২২ সালের পারমাণবিক ভঙ্গি পর্যালোচনায় বলেছে, রাশিয়া ও চীন তাদের পারমাণবিক শক্তি সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণ করছে। তবে ওয়াশিংটন ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ওপর ভিত্তি করে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
‘রুশ বাহিনীর বিশ্লেষণ ২০২৪’-এ এফএএস বলেছে, ‘যদিও রাশিয়ার পারমাণবিক বিবৃতি ও হুমকিমূলক বক্তব্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগার এবং অপারেশন চলমান আধুনিকীকরণের বাইরে আমাদের ২০২৩ সালের অনুমান থেকে সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে রাশিয়ান কৌশলগত বাহিনী ওয়ারহেডের সংখ্যা বাড়াতে পারে। কারণ একক ওয়ারহেড মিসাইলগুলোকে একাধিক ওয়ারহেডে সজ্জিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।’
রাশিয়া কী পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবে
পুতিন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করলে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করার কথা বিবেচনা করবে।
গত বছর তিনি সমন্বিত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি) রাশিয়ার অনুমোদন প্রত্যাহার করে একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে সোভিয়েত পরবর্তী রাশিয়া কখনো পরমাণু পরীক্ষা করেনি।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সমিতির মতে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে শুধু কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে, চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে পরীক্ষা করেছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বশেষ পরীক্ষা করেছিল ১৯৯০ সালে।
ব্যাপক পারমাণবিক-পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তিতে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষর করেছিল রাশিয়া। ২০০০ সালে তা অনুমোদন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল কিন্তু এখনো তা অনুমোদন করেনি।
রাশিয়া থেকে পরমাণু অস্ত্র ছোঁড়ার নির্দেশ কে দিবে
রুশ প্রেসিডেন্টই রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী।
তথাকথিত পারমাণবিক ব্রিফকেস, বা ‘চেগেট’ (ককেশাস পর্বতমালার মাউন্ট চেগেটের নামানুসারে) সর্বদা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বর্তমানে সের্গেই শোইগু ও জেনারেল স্টাফের প্রধান, বর্তমানে ভ্যালেরি গেরাসিমভের কাছেও এই জাতীয় ব্রিফকেস রয়েছে বলে ধারণা।
মূলত ব্রিফকেস হল একটি যোগাযোগের হাতিয়ার যা রাষ্ট্রপতিকে তার সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং তারপরে অত্যন্ত গোপন ‘কাজবেক’ ইলেকট্রনিক কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রকেট বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত করে। কাজবেক ‘কাভকাজ’ নামে পরিচিত আরেকটি সিস্টেমকে সাপোর্ট করে।
যদি রাশিয়া মনে করে যে তারা কোনো কৌশলগত পারমাণবিক হামলার সম্মুখীন হয়েছে, তবে রাষ্ট্রপতি ব্রিফকেসের মাধ্যমে সাধারণ স্টাফ কমান্ড ও পারমাণবিক কোড ধারণকারী রিজার্ভ কমান্ড ইউনিটগুলোতে সরাসরি লঞ্চ অর্ডার পাঠাবেন।