জরিমানা গুনে শুধু ব্যবসায়ীরা: ধান চালের অবৈধ মজুতে অসাধু কর্মকর্তাদের হাত

অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়

খাদ্য বিভাগের জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

ধান

ধান-চালের অবৈধ মজুতের সঙ্গে খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের কর্মকর্তারা এক ব্যক্তিকে একাধিক ফুড গ্রেইন লাইসেন্স দিচ্ছেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিছু প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা সরেজমিন দেখা হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সুযোগে অবৈধভাব চালের মজুত গড়ে তুলছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

অবৈধ মজুতের দায়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা হলেও সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।

৩১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আড়ত, হাটবাজার ও পাইকারি দোকানে ৩৪ হাজার ২৯২টি এবং রাইসমিল, ময়দামিল এবং অনির্ধারিত গুদামে ১৩ হাজার ৫৫৬টি অভিযান পরিচালনা করেছে খাদ্য বিভাগ। জরিমানা করা হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ৫৬৬ টাকা। কিন্তু যেসব জেলায় অবৈধ মজুত পাওয়া গেছে, ওই এলাকার বিভাগের অঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা (আরসি-ফুড), জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের (টিএফসি) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে অপরিপক্বতা দেখিয়েছেন। তাদের সতর্ক-সাবধান করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রাখতে বলেছি। আগে যে লাইসেন্সগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে এনে তারপর নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবছর চালের বাজার নিয়ে এক ধরনের খেলায় মেতে উঠে ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারদর বেড়ে গিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। এর পেছনে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। সর্বশেষ অভিযান, বাজার তদারকি এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দেখা গেছে এক ব্যক্তিকে একাধিক ফুড গ্রেইন লাইসেন্স দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। এ ধরনের লাইসেন্সের অনুকূলে অবৈধ মজুত গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ বৈধ লাইসেন্সের আওতায় অবৈধ মজুত। লাইসেন্সের শর্তাদি প্রতিপালন করছে কি না, তা যথযথভাবে মনিটর করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

কোন ব্যবসায়ী কত মেট্রিক টন ধান, কতদিনের জন্য, কোন গুদামে, কোন মিলে ভাঙানোর জন্য মজুত করতে পারবেন, তা ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের শর্তে বলা থাকে। কোনো মিলের বিপরীতে যে পরিমাণ ধান মজুত দেখানো হয়, সেই মিলের হাস্কিং ক্যাপাসিটি কত, তাও সরেজমিন পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেওয়ার বিধান রয়েছে। এমনকি ওই মিলের মাসিক বিদ্যুৎ বিল পরীক্ষা করে ধারণা নিতে হবে কত টাকা বিল আসে। মিল চালু করে দেখতে হবে সেখানে কত পরিমাণ ধান একদিনে ভাঙানো সম্ভব। ধান সংরক্ষণের জন্য গুদামের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রকৃত প্রস্তাবে কোনো গুদাম আছে কি না। সার্বিক বিষয় নিশ্চিত হয়ে তারপর ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ইস্যু করার কথা।

এরপর যদি কেউ লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধ মজুত গড়ে তোলে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও কিন্তু আরসি-ফুড, ডিসি-ফুড এবং টিএফসির। সে কাজটিও তারা সঠিকভাবে করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীরা অবৈধ মজুত গড়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এতে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এরপরও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো পদক্ষেপ নেন না। বেশি হইচই শুরু হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

২৯ ফেব্রুয়ারি খাদ্য অধিদপ্তর আরসি ফুড এবং ডিসি ফুডদের নিয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করে। ওই কর্মশালায় কর্মকর্তাদের গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ব্যবসায়ীদের অবৈধ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে তাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, আগামী দিনে কোনো ধরনের অনিয়মে জড়ালে কোনো পরিচয়ই তাদের শাস্তি পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে না। কর্মশালায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রশিক্ষণ কর্মশালা হলেও মূলত সেখানে মাঠে যারা অনিয়ম করছেন তাদের শাসানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *