বিএসএফের মদতেই গোরু পাচার

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় মিডিয়া ‌বর্তমান

টাকার বিনিময়ে রাতভর ‘অপারেশন’, চার্জশিটে দাবি ইডির

গোরু পাচার মামলায় এবার ‘কাঠগড়ায়’ বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন বাহিনীর দিকে আঙুল তুলল অর্থমন্ত্রকের অধীন তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাদের অভিযোগ, রাত ১১ টা থেকে ভোর ৩টের মধ্যে সীমান্তে চলত গোরু পাচার। আর সেকাজে সক্রিয়ভাবে মদত করতেন বিএসএফ কর্তারা। গোরু পাচার মামলায় বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল, তাঁর মেয়ে সুকন্যা সহ বাকিদের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এমনটাই দাবি করেছে ইডি। এই অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। এর আগে গোরু পাচারের কিংপিনদের সঙ্গে যোগসাজশ এবং তাদের থেকে মোটা টাকা হাতানোর অভিযোগে মুর্শিদাবাদে বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের একসময়কার কমান্ডান্ট সতীশ কুমারকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। ইডির চার্জশিটে তাঁরও নাম রয়েছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের আওতাধীন নিমতিতা, খান্ডুয়া এবং গিরিয়া সীমান্ত চৌকি দিয়ে প্রতিদিন শয়ে শয়ে গোরু বাংলাদেশে পাচারের কথা জানিয়েছে ইডি। তাদের দাবি, পাচার সিন্ডিকেটের ‘টোকেন’-এর সঙ্গে পরিচিত ছিল পাহারারত বিএসএফ জওয়ানরা। সেই টোকেন দেখিয়ে অনায়াসে সীমান্তে পৌঁছে যেত গোরু ভর্তি ট্রাক বা লরি।

২০৪ পাতার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট অনুযায়ী, গত ১০ বছর চালকল আর জমি কেনাবেচার ব্যবসাই তাঁর মূল উপার্জন বলে ইডিকে জানিয়েছেন অনুব্রত। যদিও কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযোগ, রাজনৈতিক দাপট খাটিয়ে তিনি সাহায্য করতেন গোরু পাচারের ‘কিংপিন’ এনামুল হককে। সরকারি দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের মাধ্যমে টাকা নিতেন এনামুলের থেকে। গোরু পাচার মামলায় এখনও পর্যন্ত ৭৭ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার হদিশ মিলেছে। আজ, শনিবার তিহার জেলে বাবা-মেয়ে অনুব্রত-সুকন্যার মুখোমুখি সাক্ষাতে কি সেই ‘কৃতকর্মে’র কথাই উঠে আসবে? এই নিয়ে আগ্রহ এখন তুঙ্গে।
আদালতে জমা দেওয়া সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে বিএসএফের তৎকালীন কমান্ডান্টের পাশাপাশি কাস্টমস আধিকারিকদের যোগসাজশের কথাও উল্লেখ করেছে ইডি। পাচার পর্বে কাস্টমস কীভাবে এনামুল ও তার সিন্ডিকেটের জন্য গোরুর মূল্য নির্ধারণ করত, তাও বলা হয়েছে। চার্জশিটে আরও দাবি, এনামুল হক (এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে) এবং তাঁর শাগরেদ আনারুল শেখ ও গুলাম মোস্তাফা বিএসএফ এবং কাস্টমস অফিসারদের সাহায্যে আটক (সিজড) হওয়া গোরু সস্তায় কিনতেন। সেগুলি নীলামে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হতো। তারপর খাতায় কলমে সেগুলি পশু বাজারে পাঠানো হয়েছে বলে দেখালেও, আদতে এলাকার রাখালদের মারফত তা বেআইনিভাবে পাচার হতো বাংলাদেশে। এনামুল এ ব্যাপারে সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল বলেই অভিযোগ।

তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে লালগোলা, ডোমকল, জঙ্গিপুর এবং আওরঙ্গাবাদ কাস্টমস অফিসকে ম্যানেজ করেছিল এনামুল। পাশাপাশি হুগলি, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুরের পশু হাট থেকেও কেনা হতো গোরু। তারপর চলে যেত মুর্শিদাবাদের ওমরপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি ‘সোনার বাংলা’ হোটেলে। সেখান থেকে ট্রাকে গোরু তুলে সীমান্তে। নিমতিতা, খাণ্ডুয়া, গিরিয়া কোন সীমান্ত চৌকি এলাকায় কাকে কোথায় ডেলিভারি দিতে যেতে হবে, তা গোরু বোঝাই গাড়ির চালকদের নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হতো। বিএসএফের প্রতক্ষ্য মদতে সেখানে গোরু নিয়ে পৌঁছলেই বাধাহীন সীমান্ত। ইডির চার্জশিটে এভাবে বিএসএফের নাম নির্দিষ্ট করে উল্লেখ থাকায়, আলোড়ন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এপ্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা তথা পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘সীমান্তে গোরু পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন বিএসএফ।’ খবর ভারতীয় মিডিয়া ‌বর্তমান’র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *