ময়মনসিংহ ব্যুরো ও ভালুকা প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ভালুকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যু হলেও কোল থেকে ছিটকে পড়ে অলৌকিক বেঁচে আছে দেড় বছরের শিশুপুত্র মেহেদী হাসান ওরফে জায়েদ। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের ছবি দেওয়া হয়। ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। দুই দিন পর রোববার স্বজনদের মাধ্যমে পরিচয় মিলেছে তাদের।
নিহতের বড় ভাই রবিন মিয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে মর্গে থাকা বোন জায়েদা খাতুনের (৩২) মরদেহ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভাগ্নে মেহেদী হাসানকে শনাক্ত করেন।
নিহত জায়েদা খাতুন সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে।
এদিকে রোববার সকালে হাসপাতালের পরিচালকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিশুটিকে দেখতে ওয়ার্ডে যান। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক গোলাম ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, শিশুটি এখন শঙ্কামুক্ত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকবে। প্রকৃত অভিভাবক পেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে পুলিশ জায়েদার স্বামী ফারুক মিয়াকে খুঁজছে। হাসপাতালে আগত স্বজনদের কেউ কেউ বলছেন, শিশুর বাবা ফারুক মিয়া হাসপাতালে আড়াল করে আছেন।
ভালুকা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ৯ মে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় অজ্ঞাত মা ও শিশুপুত্রকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তারা জানেন না। স্থানীয় লোকজন খবর দিলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অজ্ঞাত ওই নারী মারা যান। শিশুপুত্রটি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
নিহতের বড় ভাই রবিন মিয়া জানান, প্রথমে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেই সংসার ভেঙে যায় তার বোন জায়েদা খাতুনের। এরপর জায়েদা খাতুনের বিয়ে হয় নরসিংদীর পলাশ থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক মিয়ার সঙ্গে। স্বামী ফারুক মিয়া এর আগেও একটি বিয়ে করেন। সেই ঘরে এক স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।
জায়েদার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি তাদের পরিবার মেনে না নেওয়ায় স্বামী ফারুক মিয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। তবে ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন বোন জায়েদা এবং দেড় বছর বয়সি শিশুসন্তান মেহেদী হাসান ওরফে জায়েদকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে রবিন মিয়া জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যুর খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ নিতে এসেছি; কিন্তু পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে।
এদিকে জায়েদা খাতুনের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন ফারুক মিয়ার প্রথম স্ত্রী মোকারিমা।
নিহত জায়েদার সতিন মোকারিমা জানান, নিহত এই মহিলা তার স্বামী ফারুকের বিয়ে করা দ্বিতীয় স্ত্রী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান ওরফে জায়েদ ছাড়াও ৫ বছরের আরও একটি মেয়ে রয়েছে তাদের। যাকে তারা লালন-পালন করছেন।
তিনি জানান, আমার সংসারে তিন সন্তান রেখে সাত-আট বছর আগে জায়েদা খাতুনকে বিয়ে করে ফারুক মিয়া।