গৃহকর্মীদের শোষণের দায়ে হিন্দুজা পরিবারের ৪ সদস্যের সাজা

আইন আদালত আন্তর্জাতিক

অনলাইন ডেস্ক

ব্রিটেনের অন্যতম ধনী পরিবার হিন্দুজা পরিবারের চার সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গৃহকর্মীদের নির্যাতন ও শোষণের অপরাধে এ সাজা দেন সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত। বার্তা সংস্থা এপি খবরটি জানিয়েছে।

সুইজারল্যান্ডে নিজেদের লেকসাইড ভিলায় গৃহকর্মীদের নির্যাতনের অপরাধে শুক্রবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনকুবের প্রকাশ হিন্দুজা, তার স্ত্রী, পুত্র এবং পুত্রবধূকে চার থেকে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।

কমল হিন্দুজার আইনজীবী রবার্ট অ্যাসেল বলেছেন, আদালত মানব পাচারের অভিযোগ বাতিল করেছে বলে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন। তারপরও আদালতের শাস্তিকে তার কাছে বেশি মনে হয়েছে।

হিন্দুজা পরিবার কেন আদালতে ছিল না তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমার মক্কেলদের স্বাস্থ্য বেশ খারাপ, তারা বয়স্ক মানুষ।’ তিনি বলেছিলেন, প্রকাশ হিন্দুজার ৭৫ বছর বয়সী স্ত্রী হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন এবং পরিবার তার সঙ্গে ছিল।

অভিযোগের বিষয়ে সুইস আদালতে কৌঁসুলি ইভ বেরতোসা বলেন, ‘একজন গৃহকর্মীর চেয়ে তারা (হিন্দুজা পরিবার) তাদের একটি পোষা কুকুরের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করেন।’

কৌঁসুলিদের দাবি, একজন নারী গৃহকর্মীকে দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় মাত্র ৬ দশমিক ১৯ সুইস ফ্রাঁ। সপ্তাহের সাত দিনই তাদের দিয়ে কাজ করানো হয়।

কৌঁসুলিরা আরও বলেন, গৃহকর্মীদের সঙ্গে চাকরির চুক্তিতে কর্মঘণ্টার বা সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো কিছু উল্লিখিত থাকে না। কর্মীদের পাসপোর্টও এই পরিবার নিজেদের জিম্মায় রাখে। এসব কর্মীর কাছে খরচ করার মতো কোনো অর্থকড়িও থাকে না।

কারণ,তাদের বেতন পরিশোধ করা হয় ভারতে। এ ছাড়া, চাকরিদাতার অনুমতি ছাড়া গৃহকর্মীরা বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না। তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই।

তবে ৭৯ বছর বয়সী বিজনেস টাইকুন প্রকাশ হিন্দুজা, তার স্ত্রী কমল, পুত্র অজয় এবং পুত্রবধূ নম্রতার বিরুদ্ধে মানব পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা গৃহকর্মীদের পাসপোর্ট আটকে রাখত, ঘরের বাইরে যেতে দিত না এবং দৈনিক ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করত।

গৃহকর্মীদের বেশির ভাগই নিরক্ষর ভারতীয়। তাদের বেতন সুইস ফ্রাঁ-তে নয়, ভারতীয় রুপিতে দেওয়া হয়। বেতনের এই টাকা জমা হতো দেশে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, যার নাগাল সুইজারল্যান্ডে থেকে তার পেতেন না।

এই মামলার পঞ্চম আসামি নাজিব জিয়াজি হচ্ছেন হিন্দুজা পরিবারের ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপক। তিনি ১৮ মাসের স্থগিত সাজা পেয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে হিন্দুজা পরিবার। হিন্দুজা পরিবারের আইনজীবীরা বলেন, এই পরিবারের সদস্যরা গৃহকর্মীদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করেন। কৌঁসুলিরা গৃহকর্মীদের বেতন নিয়ে আদালতে যা বলেছেন, তাও ভুল বলে দাবি করেছে তারা।

হিন্দুজা পরিবারের কৌঁসুলিরা আদালতে পাল্টা দাবি করেন, কেবল গৃহকর্মীদের বেতন দিয়ে সবকিছু বিচার করলে হবে না। তাদের খাবার ও থাকার ব্যবস্থাও করে থাকে হিন্দুজা পরিবার। সেখানেও তাদের পেছনে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ আছে।

তিন ভাইয়ের সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি, মিডিয়া, পাওয়ার, রিয়েল এস্টেট এবং স্বাস্থ্যসেবা সেক্টরে একটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রকাশ হিন্দুজা। ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে, হিন্দুজা পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার। বিলিয়ন ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *