অলিম্পিক গেমস: অ্যাথলেটিকসে তুলকালাম

খেলাধুলা

দেশের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা * অলিম্পিকে খেলতে চাননি ইমরান * জোর করে অলিম্পিকে খেলানো হয়েছে * সাংবাদিকদের সঙ্গে মন্টু অপুর অসদাচরণ

ছবি: সংগৃহীত

প্যারিস অলিম্পিক গেমসে গেলতে গিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদ এবং সংগঠকরা তুলকালাম বাধিয়েছেন। দেশের সম্মান নষ্ট করেছেন। আথলেটিকস ডিসিপ্লিনের পর স্টেডিয়ামেই এমন ঘটনা ঘটেছে। কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানের সঙ্গে মতবিরোধ এবং সেই জের ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসদাচরণ করেছেন কর্মকর্তারা। ফ্রান্স ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল হয়েছিল স্তাদে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামে। ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্যারিস অলিম্পিক গেমসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলা অ্যাথলেটিকস।

গতকাল ছিল বাংলাদেশের ১০০ মিটার ইভেন্টের হিট বাংলাদেশের অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান ৬ নম্বর হিটে লড়াই করেন। ৮ জনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন ইমরানুর আর ৪৫ জনের মধ্যে ২৫তম হন। হিট শেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইমরানুর। সেখানেই বোমা ফাটিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী এই ক্রীড়াবিদ। ১০.৭৩ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন ইমরানুর। বাজে রেজাল্ট হওয়া তিনি হতাশ হয়েছেন। এরপরই তিনি ভেতরের কথাগুলো খুলে বলতে শুরু করেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। তিনি জানিয়েছেন অসুস্থতার কারণে প্যারিস অলিম্পিকে খেলতেই চাননি। তাকে নাকি জোর করে খেলিয়েছেন ফেডারেশন সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু।

অলিম্পিক্ষ গেমসে খেলতে বছরের পর বছর অনুশীলন করেন ক্রীড়াবিদরা। গত মার্চ থেকে ইমরানুর কোনো অনুশীলনই করেননি। তার শারীরিক সমস্যা ছিল। তলপেটে পেশি ছিঁড়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচার করতে হবে এসব সমস্যার কারণে অনুশীলন করতে পারেননি। ফেডারেশন নাম প্রত্যাহার না করায় ইমরানুর তিন সপ্তাহ অনুশীলন করে নিজে কোচ নিয়ে প্যারিসে এসেছিলেন। সাংবাদিকদের ইমরানুর জানিয়েছেন সমস্যার কারণে অলিম্পিক থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে ফেডারেশনকে অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু ফেডারেশন তাতে সায় দেয়নি। উলটে ইমানুরকে খেলার জন্য চাপ দেয়। খেলতে হবে এমন নির্দেশনা পেয়ে বাধ্য হয়ে অলিম্পিক গেমসে খেলতে প্যারিসে এসেছেন। তাহলে খেলার আগে কেন তিনি বলে আসছিলেন তিনি প্রস্তুত। সেটা নিয়েও নাকি ছলচাতুরি হয়েছে। ফেডারেশনের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলতে হয়েছে ইমরানুরকে।

ইমরান মূলত ৬০ মিটারের স্প্রিন্টার, কিন্তু তাকে ১০০ মিটার খেলতে হয়। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশে অনেক অ্যাথলেট থাকলেও ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু ইমরানুরকেই বিদেশের সব খেলায় পাঠান। অ্যাথলেটিকসে দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান। ফেডারেশন থেকে প্রতিবারই বলা হয়েছিল অলিম্পিক গেমসে লক্ষ্য রেখে ইমরানুর লন্ডনে অনুশীলন করছেন। তাকে নিয়ে ভালো কিছু স্বপ্ন দেখেছে ফেডারেশন।

কিন্তু গতকাল ইমরানুর নিজেই সাংবাদিকদের সঙ্গে জানিয়েছেন তিনি অনুশীলন করতে পারেননি। তারপরও দেশের জন্য ভালো কিছু করতেও চেয়েছিলেন, কিন্তু শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করে টেকা যায় না সেটা ভালো বুঝেন এই ক্রীড়াবিদ। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। খেলা শেষ করে নিজেকে চেপে রাখতে পারেননি ইমরান, সংবাদ মাধ্যমের কাছে বোমা ফাটিয়েছেন। তার কথায় পরিষ্কার বুঝা যায় একজন ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকের মতো বড় খেলার প্রস্তুতি না থাকার পরও আনফিট এবং অসুস্থ খেলোয়াড়কে অলিম্পিকে খেলিয়ে দেশের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাংবাদিকরা চাইলেই ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে যখন-তখন কথা বলতে পারেন না।

নিজ নিজ ইভেন্ট শেষ করে নির্ধারিত মিক্সড জোনে গিয়ে কথা বলতে হয়। সেখানে আগেই সাংবাদিকরা অপেক্ষায় থাকেন। নিজ নিজ দেশের ক্রীড়াবিদরা মিক্সড জোনে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন। প্রশ্নের জবাব দেন। গতকাল সেখানেই ইমরানুর কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। সেখানেই জানিয়েছেন অলিম্পিক গেমসে খেলতে না আসার কথাগুলো। বিষয়টি নিয়ে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন ইমরান দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। ইমরান যে বাদ হয়ে গেছে সেটি তার জানা নাই। এ কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে রেগে যান আব্দুর রকিব মন্টু। এবং সঙ্গে থাকা শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল অপু। তিনিও বলেন, ‘দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে ইমরান।’

এসব নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। সাংবাদিকদের দাবি ইমরান প্রথম হিটেই বাদ হয়ে গেছেন। আর অপু এবং মন্টুর দাবি দ্বিতীয় রাউন্ডের বাছাইয়ে খেলবেন ইমরান। সাংবাদিক বলেন আপনারা তো কিছুই জানেন না। একথা বলার পরই অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। ইমরানুরের কথাগুলো সাংবাদিকরা যখন মন্টুর কাছে বলছিলেন, তখন এসব নিয়ে ক্ষেপে যান মন্টু। সাংবাদিকরা কেন ইমরানের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা নিয়ে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে যান তিনি। অপু সব সাংবাদিককে চিনতেও পারেননি। দেখছেন বাংলাদেশের সাংবাদিক, তারপরও তাদের সঙ্গে অসদারচণ করেন। শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু থাকায় ব্যাপারটি সহজেই মিটে যাওয়ার আশা করেছিলেন সাংবাদিকরা। কিন্তু এখানেও হয়েছে উলটো। অপু নিজেও এক দুই জনের মুখ চিনতে না পারা সাংবাদিকের সঙ্গে ভালো আচরণ করেননি। ইমরান যেসব কথা ফাঁস করে দিয়েছেন তা নিয়ে মন্টু নিজেও চাপের মুখে পড়েন। মন্টু ইমরানুকে গাড়িতে বসিয়ে গেমস ভিলেজে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তার কিছুক্ষণ পরই ইমরান নিজে সাংবাদিকদের ফোন করে তার বলা কথাগুলো ভুলে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

আব্দুর রকিব মন্টু অবশ্য বলেছেন, তিনি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। পালটা প্রশ্ন করেন আমি কেন খারাপ ব্যবহার করব। আমার সঙ্গে কিছু হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমার সঙ্গে কারো কিছু হয়নি। সিডিএম-এর (শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু) সঙ্গে হয়েছে। আমার সঙ্গে না।’ ইন্তেখাবুল অপু শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব, প্যারিস অলিম্পিক গেমসে শেফ দ্য মিশন। তিনি দোষ দিয়েছেন মন্টুকে। মন্টুর কারণেই নাকি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন অপু। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাকে বলছে ইমরান বাদ হয়ে গেছে, আমি বলেছি ইমরান টিকে আছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে এটা ইতিহাস হয়েছে। আসলে ওদের (সাংবাদিক) কথাই ঠিক। মন্টু আমাকে মিস ইনফরমেশন দিয়েছে। নেগেটিভ নিউজ শুনলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। মন্টু যদি মিস ইনফরমেশন না দিত এটা হতো না। ওরাই সত্য কথা বলেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *