বঙ্গবন্ধুর বাকশাল, শেখ হাসিনার দশ প্রকল্প এবং প্রতিবিপ্লব

জাতীয় রাজনীতি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
 শাওন মাহমুদ
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ
সামাজিক ব্যবস্থা সমূহের গুণগত পরিবর্তনকে বিপ্লব বলা যায়। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও নেতৃত্বে (ব্যাক্তি, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র অথবা আপামরসাধারণের ডাকে বা নেতৃত্বে) বিপ্লব সাধিত হয়। অপর দিকে একটা গুনগত পরিবর্তন (একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দশ্যে) আসা চেতনাকে ধূলিসাৎ করে পূর্বতন ব্যবস্থায় ফিরতে যে পরিবর্তন সেটাই হচ্ছে প্রতিবিপ্লব।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এবং, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট এ দুটো ঘটনাই ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিপ্লব।
২৪ এর আন্দোলন কারীরা তথা, এনার্কিস্টরা এবারের ১৫ আগস্টের শোক পালনের বাধাদিতেই ছাত্রদের দেয়াল লিখন/গ্রাফিতি প্রোগ্রা হাতে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু অনিবার্য ভাবেই স্বাধীনতার সমার্থক। এদের দেয়াল লিখনের বেশ কয়েক জায়গায় দেখেছি এই-“আমরা ৫২ দেখিনি ২৪ দেখেছি।” কোথাও একাত্তরের উল্লেখ নেই। কারণ,২৪ এর সবাই বিশেষকরে জামাত, মার্কিন, এরা সবাই ছিলো ‘৭১ এ পরাজিত। তাই তারা, বাঙালি জাতির ইতিহাস থেকে ‘৭১ মুছে ফেলতে চায়। শুধু একারণেই তারা বঙ্গবন্ধু সমস্ত স্মৃতি ধ্বংস করতে মেতে উঠে ছিলো।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গণযুদ্ধের মাধ্যমে এই ভূভাগে বাঙালি জাতীয়বাদী নয়া শক্তি স্বাধীনতা অর্জন ও ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর চার মূল নীতির ভিত্তিতে সেই বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্বার্থক করতে এগিয়ে যাচ্ছিল। অনেক কাটাছেঁড়া, চড়াই-উৎরাই এর করণে যা, বিগত তিপান্ন বছরেও বাস্তবায়ন বা, অর্জন করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার তিনবছরের মধ্যে যখন তিনি( বঙ্গবন্ধু) বুঝতে পারলেন, সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের এই চার মূল নীতির বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা। এবং, ঐ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাই তিনি,মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা কারীদের বাদে, সমমনা সবদল নিয়ে, বাকশাল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবং এই কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা, বাস্তবায়নের পূর্বেই সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে প্রতিবিপ্লবীরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে পূর্বের শাসন ও সামাজিক পদ্ধতিতে ফিরিয়ে নেয়। ঐ প্রতিবিপ্লবের পর, প্রতিবিপ্লবীদের শাসন কর্মে মে.জে. জিয়াউর রহমান ছাড়া আর কেউই তেমন সম্পৃক্ত ছিলো না।
২০২৪ এর ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে (ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি) আগুনের লেলিহান শিখা
অথচ, যে পদ্ধতি বাস্তবায়নই হয়ইনি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার এরূপ মাত্রায় পৌঁছেছিল যে, আওয়ামী লীগ ও আর তার কথা মুখেও নেয় না। যে বামেরা আজ জামাতের সঙ্গে জোটবদ্ধ এই দলগুলোর সবাই ছিলেন বাকশালে। এমকি জিয়াউর রহমান নিজেও ছিলেন বাকশালের সদস্য।
যাহোক, ঐযে বলছিলাম সংবিধানে ঘোষিত চার মূলনীতির কথা। যাকে এক কথায় বলাহয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। উল্লেখিত চার মূলনীতির ক্ষেত্রও নির্ধারণ ছিলো। তাই, কেউ এই চার মূলনীতি যথেচ্ছ ব্যাখ্যাকরে ভুল উপস্থাপন করবেন না আশাকরি।
বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা নিজেও আর বাকশালে প্রত্যাবর্ন করেননি। তিনি দেশের আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ দশটি প্রকল্প গ্রহণ করলেন। যা সাধারণত দেশকে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমের কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করবে। এই প্রকল্প সমূহ কী?
এই দশটি প্রকল্প হচ্ছে –
সামাজিক নিরাপত্তা/ নারীর ক্ষমতায়ন/পরিবেশ সুরক্ষা /শিক্ষা সহায়ক কর্মসূচি /ডিজিটাল বাংলাদেশ/
কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য /ঘরে ঘরেবিদ্যুৎ /
একটি বাড়ি একটি খামার /বিনিয়োগ বিকাশ ইত্যাদি।
এর প্রত্যেকটিতে রয়েছে একাধিক ক্রাইটেরিয়া। যেমন- সামাজিক নিরাপত্তার জন্য রয়েছ # বয়স্ক ভাতা # বিধবা ভাতা # স্বামী পরিত্যাক্তের ভাতা # প্রতিবন্দী ভাতা # অটিস্টিক শিশুদের ভাতা। ইত্যাদি।
এই সমস্ত সহায়ক আওতায় বিপুলসংখ্যক জনগন সরাসরি আসায় দেশে কখনো বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সৃষ্টি বা, বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়নি। বর্তমান অনির্বাচিত ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন শাসকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তার, যেনো প্রকল্প সমূহ চালু রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *