ফেন্টানিলের কারণে আমেরিকাতে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ২০০ মানুষ

আইন আদালত আন্তর্জাতিক

অভিযোগের তীর চীনের দিকে
সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক জীবনে ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করেছে ভয়ংকর মাদক ফেন্টানিল। বলা হচ্ছে, এ মাদকটি যুক্তরাষ্ট্রে এখন মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ মানুষ এই মারাত্মক মাদকের ওভারডোজে মারা যাচ্ছে। ফেন্টানিল হেরোইনের তুলনায় ৫০ গুণ এবং মরফিনের তুলনায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী একটি কৃত্রিম মাদক। অস্ত্রের মতোন এ মাদকটিও আমেরিকাতে সহজলভ্য। ফেন্টালিনের সাথে জড়িয়ে গেছে চীন ও মেক্সিকোর নাম। আমেরিকান প্রশাসন মনে করছে এ দু’দেশের কাচাঁমাল দিয়ে বানানো হচ্ছে ফেন্টানিল। ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পর পরই ফেন্টানিলের উপর নজর দিয়েছে। শুল্ক আরোপসহ নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ।

জানা গেছে, ফেন্টানিল, একটি শক্তিশালী সিন্থেটিক ওপিওড, মূলত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও এর অপব্যবহার এবং চীন ও মেক্সিকোর মাধ্যমে পাচার সংকটকে তীব্রতর করেছে। এটি মূলত ব্যথা নিরাময়ে ব্যবহৃত হলেও মাত্রাতিরিক্ত সেবন প্রাণঘাতী হতে পারে। মাত্র ২ মিলিগ্রাম ফেন্টানিল প্রায় ৫০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। চীন ফেন্টানিলের প্রধান উৎপাদক, যেখানে এর কাঁচামাল তৈরি হয়। মেক্সিকো ও কানাডা ফেন্টানিল পাচারের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। মাদকগুলি সাধারণত মেক্সিকোর কার্টেলগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। চীন থেকে ফেন্টানিলের উপাদান সরবরাহ বন্ধে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ফেন্টানিলের উৎপাদন ও পাচার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১৯ সালে চীন ফেন্টানিল এবং সংশ্লিষ্ট সব পণ্যকে “নিয়ন্ত্রিত পদার্থ” হিসেবে ঘোষণা করেছে।

আমেরিকাতে এ মাদকের অপব্যবহার ও সহজলভ্যতা নজরে পড়ার মতো। রাস্তায় বিক্রি হওয়া অন্যান্য মাদকের সঙ্গে মিশিয়ে ফেন্টানিলে এখানে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বলা হচ্ছে, চীন ফেন্টানিল এবং এর কাঁচামালের প্রধান সরবরাহকারী। যদিও ২০১৯ সালে চীন এটিকে “নিয়ন্ত্রিত পদার্থ” হিসেবে ঘোষণা করে, তবুও পাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। চীন থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে মেক্সিকোর কার্টেলগুলো ফেন্টানিল তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২০২২ সালে ফেন্টানিল ওভারডোজে ৭০,০০০-এর বেশি মৃত্যু। এ মৃত্যু অনেককে ভাবিয়ে তুলছে। পরিবারগুলো আর্থিক ও মানসিক সংকটে ভুগছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো চাপে রয়েছে। ফেন্টানিলের অতিরিক্ত ব্যবহার শুধুমাত্র মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে না, এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে অচল করে দিচ্ছে। ‘ ইউএস হাউস কমিটি’র মতে, ১৮-৪৫ বছর বয়সি আমেরিকার বাসিন্দাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ফেন্টানিল। ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেল্‌থ স্ট্যাটিস্টিকস’ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২২ এবং ২০২৩ সালে আমেরিকার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ অতিরিক্ত ফেন্টানিল সেবনের কারণে মারা গিয়েছেন।

ফেন্টানিল সেবনের ফলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি এবং অপরাধ বেড়ে যাওয়ার ফলে মার্কিন অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। চীন দাবি করছে যে, তারা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও পাচার বন্ধে সক্রিয়। তবে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের মুখে চীনের পদক্ষেপগুলিকে প্রায়ই অপর্যাপ্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। মার্কিন প্রশাসন বার বার বলছে, এই মাদকের উৎপত্তি চীনে, যেখানে ফেন্টানিল এবং এর উপাদানগুলি উৎপাদিত হয়। মেক্সিকো ও কানাডার মাধ্যমে এই মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা হয়। চীনও বার বার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ফেন্টানিলের উৎপাদন ও পাচার রোধে তাদের নেওয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছে।

এদিকে মাদক পাচারের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং মেক্সিকোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করে মাদক সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করেছিলেন। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের পদে বসবেন ট্রাম্প। তবে তার আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘‘মেক্সিকো এবং কানাডার মধ্যে দিয়ে আমেরিকায় অপরাধ এবং মাদক চালান এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যা আগে দেখা যায়নি।’’ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে মাদক, বিশেষ করে ফেন্টানিল চালান এবং অবৈধ শরণার্থীদের আক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তিমূলক বাণিজ্য শুল্ক বহাল থাকবে।’গত ২৫ নভেম্বর নিজের সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ চিনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ এবং মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যগুলির উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

চীন দাবি করেছে যে তারা ফেন্টানিল উৎপাদন এবং পাচার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। বাইডেন প্রশাসন ফেন্টানিল পাচার রোধে নতুন আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। চীন-মার্কিন আলোচনায় সীমান্ত নিরাপত্তা এবং মাদক চক্র ভাঙার পরিকল্পনা চলছে। ফেন্টানিল সংকট শুধুমাত্র আমেরিকার সমস্যা নয়; এটি বৈশ্বিক বিপর্যয়। চীন, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত পদক্ষেপই এই সংকট নিরসনের একমাত্র পথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *