রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে টেলিযোগাযোগ স্থাপন, প্রকল্প ব্যয় ৯১ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যুত ও জ্বালানি

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক


রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছবি: সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে টেলিযোগাযোগ স্থাপন সংক্রান্ত কাজে ব্যয় বাড়ছে ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে দুই বছরের বেশি বাড়ছে মেয়াদও। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, রাশিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের শর্ত প্রতিপালন সম্ভব না হওয়ায় ক্রয়চুক্তি করা যায়নি। ফলে দীর্ঘ সময় চলে গেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় যন্ত্রপাতির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আছে নতুন কাজের অন্তর্ভুক্তিও।

এসব কারণে মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় শূন্য অগ্রগতি বিরাজ করছে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক্সটারনাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্পে। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ২১ আগস্ট জারি করা ওই সভায় কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পিইসি সভায় অংশ নেওয়া পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় কমানোর সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।

পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ৩৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৭২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৯১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। তবে মার্চ পর্যন্ত এটির আওতায় খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ফলে আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ। তিনি আরও জানান, প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়ে অগ্রগতি কম হওয়ায় নানা কারণে এখন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিইসি সভা সূত্র জানায়, সভায় প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, নেটওয়ার্ক ডিজাইন চূড়ান্তকরণ কাজে রাশিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ফি পরিশোধে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়। যেগুলো প্রতিপালন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ক্রয়সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও চুক্তি করতে না পারায় দীর্ঘ সময় চলে যায়। এছাড়া তিনটি এনটিটিএন অপারেটরস থেকে আইআরআই ভিত্তিতে অপটিক্যাল ভাইবার লিজ নেওয়া বাবদ চাহিদা করা ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপিতে উল্লেখ করা ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

এদিকে যখন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়, তখন বৈদেশিক যন্ত্রপাতি খাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার ছিল এক ডলার সমান ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা ৪০ পয়সা। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারে বেড়ছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। এ কারণে যন্ত্রপাতি খাতে ব্যাপক দাম বেড়েছে। আরও বলা হয়েছে, মূল ডিপিপিতে না থাকলেও চাহিদা, কারিগরি ও সেবাজনিত কারণে টেলিকম সরঞ্জামাদি ও সিকিউরিটি ইকুইপমেন্টের সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। সিকিউরিটির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সংশোধনী প্রস্তাবে সব লেয়ারে নতুন করে সিকিউরিটি যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে আরও নতুন নতুন কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে।

পিইসি সভায় দেওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুপারিশ হলো-ক্রয় পরিকল্পনায় আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নাম এবং পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী ক্রয় প্যাকেজের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ ও সুনির্দিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত যে ব্যয় হয়েছে, এর উপযুক্ত প্রমাণাদি, এমটিবিএফ (মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো) প্রত্যয়ন ও অর্থায়ন পরিকল্পনা আরডিপিপিতে যুক্ত করতে হবে। এছড়া যেসব খাতে ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *