বড় হার নয়, আলোচনা সাকিবকে ঘিরেই

খেলাধুলা

স্পোর্টস রিপোর্টার


সাকিব আল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

ভারত সফরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে। এই ম্যাচে বোলাররা লড়াই করলেও ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ছিল পুরোপুরি ব্যর্থ। কোনো রকম লড়াই করতে পারেনি স্বাগতিকদের বিপক্ষে। তাতে পাঁচ দিনের টেস্ট দেড় দিন আগেই শেষ হয়েছে। তবুও এই নিয়ে আলোচনা কম, যত আলোচনা সব সাকিব আল হাসানকে নিয়েই। চিপকের প্রেস বক্স থেকে শুরু করে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলন সব খানেই সাকিব প্রসঙ্গ। তাতেই ঢেকে গেছে শান্তদের বড় হার।

প্রসঙ্গ শুরু টেস্টের তৃতীয় দিনে। হঠাৎ ধারাভাষ্যে থাকা ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার মুরালি কার্তিক সাকিবকে নিয়ে একটি বোম ফাটানো তথ্য জানান। সেটা হলো সাকিব চোট নিয়ে খেলছেন ভারতের বিপক্ষে এই টেস্টে। তাই খুব কম বোলিং করছেন তবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। আর তারপর থেকেই জন্ম নেয় নতুন বিতর্কের। উঠে নানা প্রশ্ন। সবারই একটা কথা, টিম ম্যানেজমেন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে আনফিট সাকিবকে দলে নিয়েছে। সেই জেরে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তো সাকিবকে বাদ দেওয়ার কথাও উঠেছে। যদিও পুরোটা সময় সাকিবের ইনজুরির বিষয়টি নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প জানিয়েছিলেন, তিনি এমন (চোট) কিছু জানেন না। বিসিবিও জানিয়েছিল তারা এমন বিষয়ে অবগত নয়। তাহলে মূল ঘটনা কী? কেনই বা আসল সামনে এই ঘটনা? সব কিছুই খোলাশা করেছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রোববার প্রথম টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের চোটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আঙুলে চোটের যেই ব্যাপারটা ট্যাপ প্যাঁচানো দেখা গিয়েছে, ঐটা প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় গ্লাভসে একটা বল লেগেছিল, তো ঐখানে একটু রক্তক্ষরণও হয়েছিল। যার কারণে ট্যাপ প্যাঁচানো।’


বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

এসময় পুরো টেস্টে সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমি কখনো নির্ধারিত একটি খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। কারণ খেলাটা হলো দলীয়, আর পুরো দলের অবদানেই কিন্তু একটা ম্যাচ জেতা সম্ভব। তো সব মিলিয়ে যদি বলেন, তাহলে সবাই মিলে যদি আরো বেশি অবদান রাখতাম তাহলে ভালো কিছু হতো। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো খেলোয়াড় নিয়ে চিন্তিত না।’

এদিকে চিপকের পুরো টেস্টে সাকিবকে খুব কমই বোলিংয়ে আসতে দেখা গিয়েছে। ব্যাটিংয়ে তো আগে থেকেই ভুগছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৩২ রান করলেও আউট হয়েছেন অহেতুক শট খেলতে গিয়ে। বল করেছেন মাত্র ৮ ওভার তাও ৫৩ ওভার শেষে এসেছিলেন নিজের প্রথম ওভার করতে। রান দিয়েছেন ছয়ের বেশি করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে করেন ২৫ রান। বল হাতে ১৩ ওভার বোলিং করে আগের মতোই রান দিয়েছেন। যেখানে সবশেষ খেলে আসা কাউন্টি ক্রিকেটেও দলের সব থেকে বেশি বল করেছিলেন সাকিব।

কেন সাকিবকে কম বোলিং করিয়েছেন সেটার জবাবও দিয়েছেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে আমাদের তিন পেস বোলারই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তো আমার প্রয়োজনই পরেনি যে তাকে (সাকিব) কেলিংয়ে আনার জন্য। আর এক পাশ থেকে মিরাজ ভালো বোলিং করছিল। তো এটা একটা একটা পরিকল্পনার মধ্যেই ছিল যে, যত বেশি পেসারদের দিয়ে বল করাতে পারি এবং ছয়টা উইকেটও কিন্তু আমরা খুব তাড়াতাড়ি নিয়েছিলাম তো এটাই পরিকল্পনা ছিল।’

গেল বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবদান রাখতে পারছেন না দেশসেরা এই অলরাউন্ডার, যেমন আগে তিনি করতেন। যদিও পাকিস্তান সফরে ঐতিহাসিক জয়ে বল হাতে কার্যত ভূমিকা রেখেছিলেন সাকিব। তবে এতদিন তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন না উঠলেও চিপকে বড় হারের পর এমন প্রশ্ন এসেছে। যা শুনে শান্ত নিজেও হেসে দিয়েছেন।

এরপর সাকিব লম্বা সময় ধরে মাঠে নিষ্প্রাণ থাকার পরও কেন দলে রয়েছেন সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যেটা বললাম, অধিনায়ক হিসেবে আমি যেটা দেখি তা হলো, খেলার জন্য কতটা পরিশ্রম করছে এবং মাঠে ছন্দে ফেরার জন্য যা যা করার দরকার তা করছে কি না। দলকে কতটা দেওয়ার ইচ্ছে রাখে। আমি মূলত এসব বিষয়ই দেখি। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, সাকিব ভাইয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন দেখে এমন বলছি। বিষয়টা এমন নয়, এটা নাহিদ রানা থেকে শুরু করে মুশফিক ভাই পর্যন্ত আমি এটা খেয়াল রাখি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *