স্পোর্টস রিপোর্টার
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে নিজেদের সপ্তম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে প্রথম বিশ্বকাপের স্মৃতি মনে করাল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে প্রথম বারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
প্রথম বিশ্বকাপ হিসেবে দুই ম্যাচ জয় তা খারাপ ছিল না। তবে সেই আসরের ২৪ বছর পর আবারও দুই ম্যাচে জয় পেয়েই বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন টাইগাররা। প্রথম বারেরটা অর্জনের হলেও এবারেরটা আর তা হয়নি। এবার ছিল পুরো ব্যর্থতা ও হতাশার গল্পে ভরা।
ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস পাঁচ দেশের সমন্বয়ে আয়োজিত ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো খেলতে যায় বাংলাদেশ। সেই আসরে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার ব্যাট করে ১৮৫ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৬৩ রানে অলআউট হয় স্কটল্যান্ড। সেই জয় ছিল বিশ্বকাপে টাইগারদের প্রথম জয়।
এরপর সেই আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে তো রীতিমতো চমক দেখিয়ে দেয় গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে। আসরের উড়তে থাকা পাকিস্তানকে তো রীতিমতো টেনে নামান তারা। সেই ম্যাচেও টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ২২৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৬১ রানে গুটিয়ে যান ১৯৯২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
তবে পরবর্তী বিশ্বকাপ অর্থাৎ ২০০৩ সালেই হতাশার একটি আসর কাটান টাইগাররা। সেই আসরে নিজেদের ৬ ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি ম্যাচেই হারে বাংলাদেশ। এছাড়া একটি ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত। ঐ আসরের পর আবার পঞ্চাশ ওভারের এই বৈশ্বিক আসরে সবচেয়ে বাজে সময় কাটাল বাংলাদেশ।
কারণ ২০০৩ বিশ্বকাপের পর বাকি চার বিশ্বকাপে জয় তিনটি করে। তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার ছিল যে ছোট-বড় অঘটন ঘটিয়ে বিশ্বকে বার্তা দেওয়া, আমরা সঠিক পথেই আছি। কিন্তু ২০২৩-এ এসে পালটে গেল সব হিসাব-নিকাশ। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ফল আসবে বলেই আশা দেখিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সে নয়, ম্যাচে কেবল দুই জয় নিয়ে ভরাডুবির বিশ্বকাপের সফর শেষ করেছে। এ পর্যন্ত সাতটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। সেটি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। এছাড়া এক বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ জেতাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। সেই তিনের গেরো ছুটাতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের অধিনায়ক আবার বিশ্বকাপের আসরে তিন জয়কে খুব বড় করে দেখেন না। কিন্তু এবার তারই দল বিশ্বকাপে নয় ম্যাচের মধ্যে হেরেছে সাতটিতে। যেখানে আসর শুরুর আগে বড় গলায় জানিয়ে গিয়েছিলেন যে, এবার বড় কিছু অর্জন করেই দেশে ফিরবেন তারা।
চলতি ২০২৩ ভারত বিশ্বকাপের শুরুটা দারুণ হয় টাইগারদের। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে বড় কিছু করারই সম্ভাবনা জাগান টাইগাররা। তবে এরপরের বাকি যাত্রাটাই ছিল হতাশার। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে গোটা আসর জুড়ে অফ ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু। এরপর টানা পাঁচ ম্যাচ হারে বড় কিছু করার স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেয় বাংলাদেশের শিবিরে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন।
এর মধ্যে নেদারল্যান্ডসের কাছেও হারেন টাইগাররা। তবে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে বিগত চার আসর ধরে তিন ম্যাচে জয় তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ। তা-ও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে হারার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
চলতি আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেলে সর্বশেষ পাঁচ বিশ্বকাপের সমান তিনটি করে জয় হতো বাংলাদেশের। তবে এখানে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় চার বছর পর পর। গত পাঁচ বিশ্বকাপ হিসাব করলে মাঝখানে গড়িয়েছে ২০টি বসন্ত। গেল ২০ বছরে কি কোনো উন্নতি করেনি বাংলাদেশ দল? এই প্রশ্নটা শুধু আপনার নয়, কোটি ক্রিকেট ভক্ত বাঙালির।
চলুন এবার যেনে আসা যাক ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে দলে থাকা কোন কোন খেলোয়াড় এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছে। ১৯৯৯ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে দলকে জেতানো মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সাল থেকে এই দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এছাড়া পাকিস্তানকে হারিয়ে ঐ আসরে দ্বিতীয় জয়ের নায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ঐ ম্যাচে ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে উঠে দলকে জেতান তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টিম ম্যানাজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুজন।