মসলার দাম বাড়ছে কারসাজিতে, তদারকে কেউ নেই

জাতীয়

সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন

আসন্ন কুরবানির ঈদ ঘিরে বাজারে কারসাজি করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়ানো হচ্ছে সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। পরিস্থিতি এমন-এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ৯০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ছিল ৩৫-৪০ টাকা। পাশাপাশি আদার কেজি ৪০০ টাকা। এছাড়া মাসের ব্যবধানে হলুদ, জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, ধনে ও তেজপাতার দাম কেজিতে ৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। তবে নিশ্চুপ বাজার তদারকি সংস্থা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন ভোক্তা।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রোজার ঈদেও দেখেছি। কুরবানির ঈদ ঘিরেও দেখছি। কিন্তু বাজারে যেসব সংস্থা তদারকি করবে, তাদের নিশ্চুপ ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। তাই সংস্থাগুলোর তদারকি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এতে পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। তবে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। আর এক মাস আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৬০ টাকা। আর এক মাস আগে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০ এবং মাসের ব্যবধানে ১৫০ টাকা বেড়েছে।

নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. সালেকিন বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কিন্তু কোনো ধরনের সংকট নেই। সামনে কুরবানির ঈদ। আর এই ঈদ ঘিরে প্রতিবছর পাইকাররা পেঁয়াজের দাম বাড়ান। এবারও সেটাই করেছেন। তবে অজুহাত দিচ্ছেন-ভারত থেকে আমদানি নেই। কিন্তু দেশে যে পেঁয়াজ আছে, সেক্ষেত্রে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। আর সরবরাহ ঠিক থাকলেও আদা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এখানে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে কুরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, আদা ও পেঁয়াজের সঙ্গে হলুদ, জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, ধনে ও তেজপাতার দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ১ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। লবঙ্গ প্রতি কেজি ১৫০০ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকা, সাত দিন আগে ছিল ৮০০ টাকা। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা, আগে ৪৫০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা, আগে ১৫০-২০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি তেজপাতা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাত দিন আগে ছিল ১৫০ টাকা।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. রোকন বলেন, বাজারে এলেই নাভিশ্বাস বাড়ে। চিনির দাম সরকার নির্ধারণ করলেও সেই দামে বাজারে চিনি নেই। কিনতে হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। ভোজ্যতেলের দামও অনেক বাড়তি। সরবরাহ ঠিক থাকলেও সব ধরনের সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে মনে হচ্ছে কুরবানির ঈদ ঘিরে সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হচ্ছে। যে কারণে কিনতে হচ্ছে বাড়তি দরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, সপ্তাহের ছয় দিনই বাজার তদারকি হচ্ছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা একেক দিন একেক বাজারে যাচ্ছেন। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *