অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
এস্তোনিয়ার আমারি বিমানঘাঁটির রানওয়ের ঠিক পাশে বিমান ক্রুদের বিশ্রাম নেওয়ার একটি ঘরে টিভিতে জনপ্রিয় মার্কিন সিরিজ ফ্রেন্ডসের পুরনো সব এপিসোড চলছিল। ক্রুরা টেবিলের ওপর পা তুলে, হাতে কফির মগ নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ঠাট্টা মশকরা, গল্প করছিলেন।
হঠাৎ একজন বিমানসেনা খোলা দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠল, কালিনিনগ্রাদ থেকে উড়ে একটি জোম্বি (ভুতুড়ে) উত্তরের দিকে যাচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গেই বাকি ক্রুরা উঠে দাঁড়িয়ে পাশের অপারেশন কক্ষের দিকে ছুটল যেখানে ন্যাটো সিক্রেট লেখা কম্পিউটার স্ক্রিনের ডিজিটাল ম্যাপে ক্রমাগত নানা তথ্য আসছে।
এই বাহিনীর নাম ‘কুইক রেসপন্স ফোর্স ফর অপারেশন এ্যাজোটাইজ।’ ন্যাটো জোটের উত্তর-পূর্বের আকাশসীমা পাহারা দেওয়া এই ইউনিটের কাজ। আর ন্যাটোর এই সীমান্তে নিয়মিত রুশ যুদ্ধবিমান দেখা যায়।
এপ্রিল মাসে জার্মানির রিখতোফেন স্কোয়াড্রনের কাছ থেকে এস্তোনিয়ার এই বিমানঘাঁটির দায়িত্ব নেয় ব্রিটিশ বিমান বাহিনী আরএএফ-এর টাইফুন যুদ্ধবিমানের নবম স্কোয়াড্রন।
ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে ন্যাটো সামরিক জোট তাদের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রক্ষার তৎপরতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
লক্ষ্য একটাই রাশিয়া যেন অন্য কোনো দেশে, বিশেষ করে ন্যাটো জোটের বাল্টিক অঞ্চলের তিনটি দেশ (এস্তোনিয়া, লাতভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া) বা পোল্যান্ডে, একইরকম হামলা চালানোর সাহস না করে।
সীমান্তের আকাশে সন্দেহজনক রুশ যুদ্ধবিমানকে ন্যাটোর এই বিমানঘাঁটির ক্রুরা বলেন ‘জোম্বি’বা ভুতুড়ে। এটি তাদের কোড-নেম।
রুশ যুদ্ধবিমানের তৎপরতা সম্পর্কে বলেন আরএএফ-এর উইন্ড কম্যান্ডার স্কট ম্যাকল বলেন, যেকোনো তিনটি সম্ভাব্য বিষয় দেখা দিতে পারে। হয় সেগুলো তাদের ফ্লাইট-প্ল্যান আগে থেকে জানায় না, অথবা তারা কোনো ধরনের যোগাযোগ করে না অথবা আমাদের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের পাঠানো কোনো বার্তার কোনো জবাবই দেয় না।
আমারি বিমানঘাঁটির কাছের আকাশে সেদিন যে রুশ বিমানটির দেখা মিলল সেটি ন্যাটো সীমান্তের উল্টোদিকে উত্তরে উড়ে গেল।
এস্তোনিয়ার এই বিমান ঘাঁটিটি শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। কাছের একটি জঙ্গলে রয়েছে নিহত সোভিয়েত পাইলটদের একটি কবরস্থান।
এখানে মোতায়েন ন্যাটো পাইলটদের কাজ বেশ জটিল এবং ২৪ ঘণ্টাই তাদের সজাগ থাকতে হয়। ফিনল্যান্ড যোগ দেবার পর বাল্টিক সাগর সীমান্তে এখন ন্যাটো জোটের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত। সুইডেন এখন যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ার ভেতর রয়েছে। তা সম্পন্ন হলে সংখ্যা দাঁড়াবে আট।
কিন্তু বাল্টিক অঞ্চলে এখনো রাশিয়ার দুটো শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। পূর্বে সেন্ট পিটার্সবুর্গ এবং পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মাঝে রুশ ভূখণ্ড কালিনিনিগ্রাদ যেখানে রাশিয়া ব্যাপক সংখ্যায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে।
এই দুই ঘাঁটির মধ্যে রাতদিন রুশ এসইউ ২৭ যুদ্ধবিমান, সামরিক কার্গো বিমান, গোয়েন্দা বিমান যাতায়াত করে। ফলে, নেটো জোটের বিমান বাহিনী সর্বক্ষণ তটস্থ থাকে।
হ্যাঙ্গারের ভেতর রাখা একটি টাইফুনের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল বিমানটি সমস্ত অস্ত্রে সজ্জিত যাতে দরকার পড়লেই লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
তবে আরেকজন পাইলটের জবাব ছিল কিছুটা খোলামেলা তিনি বলেন, আমরা জানি না ঠিক কোন বিমানের মুখোমুখি আমরা হব। সুতরাং আমরা পাশাপাশি উড়তে থকি। বোঝার চেষ্টা করি এই বিমানটি কী এবং কাদের। তারপর অপারেশন সেন্টারের সঙ্গে কথা বলি। তারা যে নির্দেশ দেয় সে মতো কাজ করি।
এই আরএএফ পাইলটরা রুশ বিমানগুলোর কাছাকাছি হলে সেগুলোর ছবি তোলে, যতগুলো সম্ভব ছবি তোলে।
শুধু আকাশে নয়, স্থলে মোতায়েন সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা কালাস, যার জন্ম এবং অনেকটা সময় বড় হওয়া সোভিয়েত আমলে, বিবিসিকে বলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি ইউক্রেনে সফল হন, তাহলে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি এরপর বাল্টিক দেশগুলোর দিকে নজর দেবেন।
ন্যাটো জোট রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তার নীতি অনুসরণ করে। তারই অংশ হিসাবে এস্তোনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় তাপায় ব্রিটিশ নেতৃত্বে বহুজাতিক একটি বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তাদের কাছে রয়েছে চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংক এবং মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস), ওয়াইল্ড ক্যাট এবং অ্যাপাচে হেলিকপ্টার।
মূল লক্ষ্য – রাশিয়া যেন এখানে হাত বাড়ানোর সাহস না করে।
সূত্র: বিবিসি