ধর্মীয় উৎসবও কেন হয়ে পড়ছে বৃত্তবন্দী ?

অন্যান্য খোলা কলাম জাতীয় ধর্ম ও দর্শন

সুবর্ণবাঙলা ওয়েব ডেস্ক

হজ্জ, কোরবানি এ সকল ইসলামি অনুশাসন পালন করাটা কি দিন দিন কঠিন করে ফেলা হচ্ছে? নামকাওয়াস্তে ইসলামি রাষ্ট্রের সাথে তা মানানসই?
আমরা যাঁরা মুসলিম তাদেরকে বেশকিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে হয়, যার সাথে আর্থিক বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। অথচ ইদানীং দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগামীতা আমাদেরকে এ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এ বছরের হজ্জের আকাশচুম্বী খরচের কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও হজ্জে যেতে পারেননি। এ বছরই প্রথম সৌদি সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া হাজীর কোটা পূর্ণ হয়নি। আর এই বিপুল পরিমাণ বাড়তি খরচের কারণটি সরকারের অতি বানিজ্যিকীকরন ও অতি মুনাফালোভী মনোবৃত্তি বলে মানুষ মনে করেন। এর প্রমাণ হিসেবে আমাদের আশপাশের দেশগুলোর হজ্জের খরচ কতোটা কম তা দেখেই নির্দ্বিধায় বলা যায়। সরকার কতটা নির্লজ্জ তা শুধুমাত্র একটা বিষয়েই নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে আর তা হলো বছরের অন্যান্য সময়ে বিমানে আসনসংখ্যার চেয়ে কম যাত্রী নিয়ে যে ভাড়ায় সৌদি আরব যায়, অথচ হজ্জের ফ্লাইটে বিমানের প্রতিটি আসনে যাত্রী নিয়েও দ্বিগুণ ভাড়া নির্ধারণ করে।

হজ্জ না হয় উচ্চবিত্তদের ব্যাপার! কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত মুসলমানদের আবেগ অনূভুতির জায়গা বছরে একবার ঈদুল আজহায় কোরবানি দেওয়ার ব্যাপারেও শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। বিগত ৫/৬ বছরের তুলনায় গরু ছাগলের দাম কতো গুন বৃদ্ধি পেয়েছে কোনো পরিসংখ্যান আছে? ৪/৫ বছর আগেও ৫০/৬০ হাজারে মাঝারি মানের গরু কেনা যেতো। আর সেই মানের গরুর দাম এখন ১,৩০,০০০- ১,৫০,০০০/। কারনটা কি গোখাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি! মুল্য বৃদ্ধি পায়নি কোথায়? আসলে গোখাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি যতোটা না কারন তারচেয়ে বড় কারন হচ্ছে লোভ, অদুরদর্শী পরিকল্পনা, ইসলাম বিরোধী একটি গোষ্ঠীর সূদুর প্রসারী কূটকৌশল।

গরুর মুল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারন হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধ করা। গরু আমদানি না করার পিছনে যুক্তি দেখানো হয় গরু খামারিদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। অথচ সরকার কি জানেননা এদেশের ব্যাবসায়ীদের ওয়াকওভার দিলে এরা কি করতে পারে? এ গো-শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ধোঁয়া তুলে সিন্ডিকেট করে মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশে এখনো গরুর গোশত ২৮০/৩০০ টাকা সেখানে আমাদের দেশে ৮৫০/৯০০ টাকা কেজি।

যে রাষ্ট্র আদা, পেঁয়াজ, রসুন, তেজপাতা সহ সবকিছুই আমদানি নির্ভর, স্বনির্ভরতা শুধু গরু ছাগলের বেলায়। যে দেশের সিন্ডিকেট এতো শক্তিশালী যে সময়ে সময়ে ডিম, মুরগী, আদা, সয়াবিন, চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়, আবার আমদানির সিদ্ধান্ত হলেই (বাস্তবায়নের আগেই) ধুম করে দাম কমে যায় সেদেশে ঘোষণা দিয়ে স্থায়ীভাবে গরু আমদানি নিষিদ্ধ করায় ওদের পোয়াবারো। হ্যাঁ এখানে যদি এমনটা হতো বিদেশি গরুর সাথে প্রতিযোগিতা করে বাজার সৃষ্টি করতে হবে তাহলে ঠিক ছিলো, পুরোপুরি বন্ধ করে তো ওদের হাতে এ খাতকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার নিষিদ্ধ পন্য ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হিরোইন, স্বর্ন অবাধে দেশে ঢুকছে কারো তেমন তৎপরতা নেই, অথচ গরু আসবার ব্যাপারে একদম সিলমোহর মেরে দিয়েছে।

আমরাও চাই গো-শিল্পে দেশ স্বনির্ভর হোক কিন্তু সেটা প্রতিযোগিতামুলক ভাবে। একচেটিয়া, নিয়ন্ত্রণহীন এবং জনগণকে জিম্মি করে, গরীব এবং মধ্যবিত্তকে গরুর মাংস বঞ্চিত করে কেন?

এছাড়া প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কি বিভিন্ন খামারে নজরদারি আছে? কোন স্টেরয়েড, মোটাতাজা করন ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজা করন হচ্ছে কিনা তা কি তদারকি হচ্ছে? তাঁরা যেভাবে লাইভ ওজন করে বিক্রি করছে, সে দাম কি সরকার বেধে দিয়েছে? বিভিন্ন হাটের ইজারাদারগন যেভাবে ট্রাক আটকিয়ে, গরু সরিয়ে রেখে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে গরুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সেদিকে কি কোনো নজরদারি আছে? ট্রাকে, ফেরিতে, ট্রলারে যে চাঁদাবাজি চলছে তা দেখার দায়িত্ব কার? প্রান্তিক কৃষক কি ন্যায্যমুল্য পাচ্ছে? দাদন ব্যাবসা কি বন্ধ হয়েছে? ফরিয়া, দালাল তথা মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম কমাতে পেরেছে?

আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভারত নির্ভর, চিকিৎসার প্রয়োজনে ছোট-বড় সবাই ভারতে দৌড়াই তখন স্বাস্থ্যসেবায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রশ্ন আসে না, শুধু গো-পালনে স্বনির্ভরতার জন্য ওদের জীবনবাজী।

আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় বাজারে এবং খামারে ছোট এবং মাঝারি গরুর সংকট, সবাই ২/৩/৮/১০ লাখ টাকার গরু মোটাতাজা করে বাজারে আনছে, কারনটা কি? এই বিশাল বিশাল গরু পালনের পিছনে হেতু কি?

আসলে মধ্যবিত্ত এবং গরীব মানুষের এ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে এবং গরীব মানুষের গোশত খাওয়ার উপর শকুনের চোখ পড়েছে। আগামীতে হজ্জের ন্যায় এ কোরবানি দেওয়ার ইসলামি বিধানটিও মধ্যবিত্ত আর গরীবের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে যাবে।

(লেখা: এএসএম মাসুদ এর ফেস বুক ওয়াল থেকে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *