সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি ‘রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’র নাম বদলাতে চান এর প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি ডা. এইচবিএম ইকবাল। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বদলে তিনি তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর নামে ‘ডা. মমতাজ বেগম রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’ করতে চান। এ ব্যাপারে সরকারের অনুমতি চেয়েছেন তিনি। তবে এতে বাদ সেধেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। জানা গেছে, চলমান কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এভাবে নাম পরিবর্তনের আইনগত সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার নাম পরিবর্তন করতে গত জানুয়ারিতে চ্যান্সেলরের সচিবালয় হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ডা. মমতাজ বেগম ঢাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচবিএম ইকবালের প্রয়াত সহধর্মিণী। গত বছরের ২৭ জুন তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান। বেসরকারি রয়েল ইউনিভার্সিটি ২০০৩ সালে সরকারের অনুমোদন পায়। এটি রাজধানীর বনানীর ই ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত। ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদে সাতটি বিভাগে ১১টি প্রোগ্রাম চলমান। ১৩ হাজার ২৫ বর্গফুটের ভাড়া করা ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থী ১ হাজার ৩৮৫ জন। আর শিক্ষক আছেন ৪৩১ জন।
নাম পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন পাওয়ার পর গত ২৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর কাছে চিঠি দিয়ে সুস্পষ্ট মতামতের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইউজিসি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেয়নি বলে জানা গেছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে ইউজিসি তার মতামত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মতামত জানতে চাওয়ার পর ইউজিসি কর্তৃপক্ষ আবেদনটি ইউজিসির আইন সেলে মতামতের জন্য পাঠায়। লিগ্যাল সেল এ বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিয়েছে বলে জানা গেছে। লিগ্যাল সেলের মতামতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুসারে চলমান কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ ছাড়া নাম পরিবর্তনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক বিষয় জড়িত। অতীতে যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন (অ্যালামনাই) নাম পরিবর্তন হলে তাদের পরিচয়গত সমস্যা হবে। এটা তাদের মনঃকষ্টের কারণ হবে।
দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনগত বিষয় যেমন– শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে কোনো মামলা-মোকদ্দমা হলে নাম পরিবর্তনের কারণে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। চেষ্টা করেও ‘রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. এইচবিএম ইকবালের এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। পাওয়া যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র শীলকেও।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, আমরা নাম পরিবর্তনের আবেদন করেছি সত্য। ইউজিসির লিগ্যাল সেলের উপসচিব (জেলা দায়রা জজ) নূরনাহার বেগম শিউলী সমকালকে বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সুযোগ আছে কিনা জানা নাই।’
ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ সমকালকে বলেন, বিদ্যমান আইনে নাম পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তবুও আমরা এ বিষয়ে আমাদের লিগ্যাল সেলের মতামত নিয়েছি। সেই মতামতের ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রের জবাব দেওয়া হবে।