সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন
নগরীতে নিজেদের মধ্যে মারামারির নাটক সাজিয়ে ছিনতাই করে আসছিল একটি চক্র। এভাবেই রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ীর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই করে চক্রটি।
তবে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এ সময় ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে সাত লাখ ১০ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার দামপাড়ায় সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশলের তথ্য জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান।
সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে গ্রেফতার হওয়া চারজন হলেন- মো. একরামুল আলম (৩৭), সাহেব হাসান মনা (২৪), মো. ইরফান ওরফে সাব্বির (২৪) ও রবিউল হোসেন ওরফে ইবু (২৩)। এদের মধ্যে একরামুলের বাড়ি পটিয়ার দেউরডেঙ্গায়, সাহেদের বাড়ি মিরসরাই, ইয়াছিনের বাড়ি সাতকানিয়া এবং রবিউলের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়।
চক্রের মূলহোতা একরামুল বঙ্গবন্ধু পরিষদের কথিত নেতা পরিচয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। এছাড়া সব আসামির বিরুদ্ধে ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসামিরা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে এবং তাদের ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। চক্রের কয়েকজন আগে ব্যবসায়ীদের পর্যবেক্ষণ করে। ব্যবসায়ীদের কে কখন কোন ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায় বা কে উত্তোলন করতে যায় সেটি অবগত হয়ে একপর্যায়ে যে ব্যক্তি ব্যাংকে টাকা জমা দেয় বা উত্তোলন করে তাকে টার্গেট করে। এছাড়া আগে থেকে ওতপেতে থাকা স্থানে পৌঁছামাত্রই মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে; যাতে কোনো পথচারী বাঁচানোর চেষ্টা না করে। মারামারির একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় চক্রটি। তারা বেশিরভাগই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।
তিনি বলেন, নুর এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনসেট বিক্রি করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের এসআর মোরশেদ আলম (২২) ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া (৫৫) প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং লেনদেনের সকল কার্যক্রম করে থাকে। সেই হিসেবে গত রোববার দুপুরের দিকে দুজনেই একটি লাল রংয়ের পুরাতন ব্যাগে প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় নগরীর কোতোয়ালি থানার জুবিলী রোডের রয়েল টাওয়ারের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন আসামি তাদের দুইজনকে ধাক্কা দেয়। সহকারী ম্যানেজার ত্রিদিব বড়ুয়া ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আসামিরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাদের কাছ থাকা ব্যাগভর্তি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।
এরপর ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনতাই কাজে জড়িত আসামি সাহেদ হোসেন মনাকে শনাক্ত করে সোমবার দুপুর ৩টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রউফাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা জানায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর বলেন, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে একরামুল আলমের বিরুদ্ধে দুটি চাঁদাবাজির মামলা আছে। এছাড়াও আসামি সাহেদ হোসেন মনার বিরুদ্ধে দুটি চাঁদাবাজি, দুটি অস্ত্র মামলা ও তিনটি জখম সংক্রান্ত মামলা আছে। অপর আরেক আসামি ইয়াছিনের বিরুদ্ধেও দ্রুতবিচার আইনে একটি ছিনতাইয়ের মামলা আছে।