ভারত এবার কেন্দ্রীয় ভাবে সিলেবাস থেকে বাদ দিল মুঘল যুগের ইতিহাস !

আন্তর্জাতিক

নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা:

মোদি জমানায় মুঘলসরাই রেলস্টেশনের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপদ এবং সড়কের মুঘল-ঘেঁষা নাম বদলের খেলা চলছে। কিন্তু এবার আর বিক্ষিপ্ত কোনও সিদ্ধান্ত নয়, সরাসরি কেন্দ্রীয় স্কুল সিলেবাস থেকেই বাদ পড়ল মুঘল যুগের ইতিহাস। কেন্দ্রচালিত বিদ্যালয়, আর্মি স্কুল, সেন্ট্রাল স্কুল সহ সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলগুলির দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে আর এই অধ্যায় থাকবে না। ইতিহাস বই থেকেই পুরোপুরি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হচ্ছে এই নয়া সিলেবাস। উত্তরপ্রদেশ বোর্ডেও তা কার্যকর হবে। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বদলের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু এবার তারা ইতিহাস পাঠ্য বইয়ের পাতা থেকেই বাদ দিচ্ছে পুরো মুঘলপর্ব।

নয়া ভারতীয় জাতীয় শিক্ষানীতি ভারত জুড়ে কার্যকর করার আগেই সিলেবাস বদলে ফেলার একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ সমাপ্ত করতে চায় মোদি সরকার। তার জেরেই দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে ‘কিংস অ্যান্ড ক্রনিকলস: দ্য মোগল কোর্টস’ শীর্ষক অধ্যায়। শুধু ইতিহাসই নয়, সমাজবিজ্ঞান এবং হিন্দি সাহিত্যের বই থেকেও বাদ পড়তে চলেছে বেশ কিছু অধ্যায়, যেগুলি সোজা কথায় গেরুয়া মতাদর্শের বিরোধী। যেমন সমাজবিজ্ঞান বইতে থাকছে না বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব সংক্রান্ত (আমেরিকান হেজিমনি ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স) অধ্যায়। এমনকী রাশিয়া ও আমেরিকার বিখ্যাত ঐতিহাসিক ঠান্ডা যুদ্ধের বিবরণও (দ্য কোল্ড ওয়ার এরা) বাদ যাচ্ছে। ‘স্বাধীনতার পর ভারতের রাজনীতি’ সংক্রান্ত পরিচ্ছদ আর থাকবে না। শুধু দ্বাদশ নয়, একাদশ শ্রেণিকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের সিলেবাসে ‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’ অথবা ‘শিল্পবিপ্লব’ সংক্রান্ত অধ্যায়ও আর রাখা হবে না বলে স্থির হয়েছে। এতগুলি বদলের মধ্যে অবশ্য যেটি সবথেকে উল্লেখযোগ্য, দশম ও একাদশ শ্রেণির সিলেবাসে থাকা সেই অধ্যায়টির নাম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ—‘গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য’! ইতিহাস, পার্লামেন্ট, পাঁচশো হাজার টাকার নোটের মতো আগামী দিনে বদলে যাবে ভাতের গণতন্ত্রও!

দিল্লির কেন্দ্রস্থল, ইন্ডিয়া গেটকে ঠিক মাঝখানে রেখে বৃত্তাকার রাজপথ থেকে একের পর এক রাস্তা রাজধানী শহরের বিভিন্ন প্রান্তের দিকে ছিটকে চলে গিয়েছে। কোনও রাস্তার নাম আকবর রোড, কোনওটির কোপার্নিকাস মার্গ, অশোক রোড অথবা কস্তুরবা গান্ধী মার্গ ইত্যাদি। এরকমই একটি রাস্তার নাম বদলে দেওয়া হয়েছিল হঠাৎ। সেটির নাম ছিল আওরঙ্গজেব রোড। তা বদলে দিয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে এ পি জে আবদুল কালাম রোড। মোদি সরকার ও দেশের শাসকদলের হর্তাকর্তাদের দীর্ঘকালের দাবি ও অবস্থানই হল—মহম্মদ ঘোরীর দিল্লিবিজয়ের পর থেকে ভারতের ইসলামি এবং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসকে বদলে দেওয়া। রাজস্থানে বিজেপি ক্ষমতাসীন থাকার সময় স্কুল সিলেবাসে হলদিঘাটের যুদ্ধে রাণা প্রতাপই আসলে বিজয়ী হয়েছিলেন বলে লেখা হয়। সমালোচকদের দাবি, তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবার জাতীয়স্তরে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আশিস দাস। তিনি বলেন, ‘ভারতের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্র। মুঘল শাসনকে বাদ দিয়ে কি ভারতের ইতিহাস বোঝা সম্ভব? ওরা একটা সময় বলতে শুরু করবে ভারতের ইতিহাস শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে, মোদি ক্ষমতায় আসার পর।’

ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত। এবার তুর্কি, আফগানদের নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। বাংলার ইলিয়াস শাহীদের নিয়েও কী করবে জানি না। ৪০০ বছরের ইতিহাস বাদ দিতে চাইছে। এর বিকল্প হিসেবে কী দেবে? সর্বস্তরে প্রতিবাদ হওয়া দরকার বলে মনেকরেন ব্রাত্য বসু, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *