সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
অভিযুক্ত আপন দুই বোন নার্গিস আকতার ও নাসরিন আকতার। ছবি: ইত্তেফাক
নার্গিস আকতার ও নাছরিন আকতার আপন দুই বোন। নার্গিস আকতার ৬৯ নম্বর হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আর নাছরিন আকতার ২২ নম্বর হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
জানা গেছে, দুই বোনসহ পুরো পরিবারই আমেরিকায় থাকেন তারা। তবে দুই বোন স্থায়ীভাবে আমেরিকা থাকলেও সরকারি দপ্তরে তারা বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত। তাদের আমেরিকা বসবাসের খবর জানে না স্কুল ও শিক্ষা বিভাগ। ঘিওর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘদিন তারা বিনা অনুমতিতে স্কুলে না এলেও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিশেষ সুবিধা নিয়ে প্রথম দিকে তাদের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখেন। পরে স্কুলের শিক্ষক সংকটে পাঠদানে সমস্যা দেখা দেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ৮ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার তাপস অধিকারী সরকারি কর্মচারী কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে না মর্মে চিঠি দিয়েছেন।
দুই শিক্ষকের বাসায় নোটিশ সেটে দিচ্ছে স্কুল ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত
সরেজমিন হিজুলিয়া ২২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গেলে কথা হয় দুজন সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাছরিন আকতার বিদ্যালয়ে আসছেন না। তবে ওই শিক্ষক কোথায় আছেন এ বিষয়ে তারা কিছু জানাতে পারেননি।
এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত রয়েছেন নাছরিন আকতার। বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক অনীতা রানী তরফদার জানান, তিনি জেনেছেন সহকারী শিক্ষক দেশের বাইরে আছেন। তবে ওই শিক্ষক আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে কিছু জানাননি।
৬৯ নম্বর হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রূপা আক্তার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শিক্ষক নার্গিস আকতার দীর্ঘদিন বিনা স্কুলে অনুপস্থিত। ওয়েবসাইটে এখনো তিনি বহাল আছেন। এ কারণে তার পরিবর্তে অন্য কোনো শিক্ষক পদায়ন করতে পারছেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই বোনের ভাই মো. রেজাউল করিম উজ্জ্বল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তার কারণে দুই বোনের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্কুল ও উপজেলা শিক্ষা অফিস কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেরি করছে।
রেজাউল করিম উজ্জ্বল জানান, তার দুই বোন আমেরিকায় বসবাস করেন না। তারা দেশেই আছেন। এবং কিডনিজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষা বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, নাছরিন আকতার ও নার্গিস আকতার দুজনই সপরিবারে আমেরিকায় আছেন।
ঘিওর উপজেলা শিক্ষা অফিসের ক্লাস্টার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নায়েব আলী জানান, শিক্ষক নার্গিস আকতারকে দ্বিতীয় দফা কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তাকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা কেন হবে না সে মর্মে ৮ জুন ১০ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দিলেও এখনো উত্তর পায়নি কর্তৃপক্ষ। একই অভিযোগ আরেক বোন নাছরিন আকতারের বিরুদ্ধেও। তাকেও অনুরূপ চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক নার্গিস আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আলমগীর হোসেনের নামে ভুয়া চিকিৎসাপত্র দাখিল করে দীর্ঘদিন ছুটি নেওয়ার অভিযোগ আলোচনায় উঠে আসছে।
সেই চিকিৎসাপত্র দেখালে ডা. আলমগীর হোসেন (বর্তমানে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের সহকারী সার্জন) বলেন, এটি আমার হাতের লেখা নয়। আমার নামে ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন তারা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার পারভীন বলেন, দুটি বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপুস্থিত থাকায় আমরা তাদের কয়েক দফা নোটিশ প্রদান করি। নোটিশের কোনো ধরনের জবাব না পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি সর্ম্পকে অবগত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। যা তদন্তনাধীন রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এই কর্মস্থলে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।