ডিবির জালে ৪ প্রতারক: হঠাৎ সম্পদশালী ব্যক্তিদের নামে অভিযোগনামা তৈরি করত তারা

আইন আদালত

সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নামে ঘুস-চাঁদাবাজির মাধ্যমে গত এক বছরে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ওই চক্রের চার সদস্য ধরা পড়েছে ঢাকা মাহনগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জালে। জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করেছে ডিবি লালবাগ বিভাগের একটি টিম।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- সেলিম ওরফে তানভীর ইসলাম ওরফে শফিকুর রহমান (৩৯), সোহাগ পাটোয়ারী (৩৮), আব্দুল হাই সোহাগ (৩৮) এবং আজমীর হোসেন (৩৭)।

সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী।

এর আগে মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তরে ‘টার্গেট মন্ত্রী, এমপি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/দুদকের নামে প্রতারণার হোতা উপপরিচালক!’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার বলেন, গ্রেফতারদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ৭টি মোবাইল, ১০টি সিম, বাংলা টিভি ৭১’র কর্ডলেস মাউথ পিস, পত্রিকা, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের ৭টি ভুয়া আইডি কার্ড, দুদক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের ১২টি প্রতিবেদন/নোটিশ এবং বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল নম্বর লেখা ৩টি নোটবুক জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, দুদকের নামে ঘুস গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম রমনা থানায় ১৩ আগস্ট মামলা করেন। এর পরদিন যাত্রাবাড়ী, মুগদা ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ডিবিকে জানায়, কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে সম্পদশালী হলে তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযোগনামা তৈরি করত চক্রের সদস্যরা। পরে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করে অভিযোগ নিষ্পত্তির নামে টাকা হাতিয়ে নিত। কখনো কখনো দুদকের অনুমোদিত নোটিশের কপিও চলে যেত চক্রের সদস্যদের কাছে। টার্গেট করা ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া সংক্রান্ত ভুয়া প্রতিবেদেনও দিত তারা।

ডিবি কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুন্নবী জানান, আসামি শফিকুর রহমান এক সময় রড মিস্ত্রির কাজ করত। পরবর্তীতে নির্মাণ কাজের ঠিকাদারিতে যুক্ত হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়, বিভিন্ন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামে পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, হিসাবরক্ষক ও সার্ভেয়ারদের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই বর্তমানে তার কাজ।

আসামি সোহাগ পাটোয়ারী একসময় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ডিজে পার্টিতে কাজ করত। পরে এ কাজ বাদ দিয়ে দুদকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের নামে গঠন করা অভিযোগ, অভিযোগ থেকে দায় মুক্তিসংক্রান্ত চিঠি ডাউনলোড করে প্রতারক সেলিমের কাছে পাঠাত।

সেলিম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করাত আব্দুল হাই ও আজমির হোসেনের মাধ্যমে। চক্রের সদস্যরা দুদকের কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালকদের নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি করতেন। তারা টার্গেট ব্যক্তিদের কাছে ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *