সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন
দুমড়েমুচড়ে গেছে মাইক্রোবাসটি
নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে হতাহতরা সবাই একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী। ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার এসবি নিটিং নামের একটি পোশাক কারখানায় তারা চাকরি করতেন। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে সবাই একসঙ্গেই চলাফেরা করতেন। শুক্রবার ছুটির দিনে দলবেঁধে মাইক্রোবাসে করে সিলেটে ঘুরতে যাচ্ছিলেন তারা। বেপরোয়া গতির পাথরবাহী ট্রাকের চাপায় এখন তাদের সাতজনের লাশ মর্গে। গুরুতর আহত অপর দুই সহকর্মীসহ চারজন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ট্রাক দ্রুতগতিতে আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে মাইক্রোবাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটিতে থাকা নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর মোতাহারের ছেলে মো. সবুজ (৩২), ঝালকাঠির রাজাপুরের আবদুল গণি হাওলাদারের ছেলে আল আমিন হাওলাদার (২৭), বরিশালের মুলাদীর মজিবর সিকদারের ছেলে আরিয়ান সিকদার (২৫), জামালপুরের সরিষাবাড়ীর দুখু মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ (৩৭), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মৃত আইয়ুব খানের ছেলে আল আমিন খান (২৭), মাদারীপুরের কালকিনির তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আওয়াল (৪০) ও কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)।
আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- সাকি, পারভেজ ও দোয়েল। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিহতদের মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতদের লাশ নিতে মর্গের সামনে স্বজনদের অপেক্ষা
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে যান এসবি নিটিং কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শিহাব উদ্দীন। তিনি বলেন, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। তাদের মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোরকিপার। কিছুদিন ধরেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১-১২জন ওই মাইক্রোবাসে সিলেটের দিকে রওনা হন। পথে নরসিংদীতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঘাসিরদিয়া এলাকায় অন্য একটি গাড়িকে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় সামনে চলে আসা মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। খবর পেয়ে দ্রুত ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাদের মৃত্যু হয়।
আহত চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ছয়জনকে রাতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অন্য চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া জানান, দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস ও পাথরবোঝাই ট্রাক জব্দ করে ফাঁড়িতে আনা হয়েছে। ট্রাকটির চালকও আটক আছেন। নানা মাধ্যমে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে খবর জানানো হচ্ছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী জানান, ট্রাকচাপায় হতাহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। নিহত সাতজনের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তাদের স্বজনেরা এলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।