সাতক্ষীরার ‘বেওয়ারিশ ব্রিজ’ ভেঙে পড়ে নির্মাণের পাঁচ বছরে!

জাতীয় পরিবহণ-পর্যটন ও যোগাযোগ

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক


মরিচ্চাপ নদীতে ভেঙে পড়েছে কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া ব্রিজের খণ্ডচিত্র।

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে সন্ধান মিলেছে এক বেওয়ারিশ ব্রিজের। দাপ্তরিক জটিলতার কারণে কোনো নির্দিষ্ট অভিভাবক না পাওয়ায় এটাকে বেওয়ারিশ ব্রিজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী।

আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছে মরিচ্চাপ নদী। আর এই দুই ইউনিয়নে বাসিন্দাদের মাঝে যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া ব্রিজ। নির্মাণের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে এই ব্রিজটি। প্রায় দেড় বছর আগে ভেঙে পড়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

এর মাঝে সংস্কার অথবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক জটিলতার। এলজিইডি বলছে ব্রিজটি তাদের নয়, এটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন। অন্যদিকে উপজেলা প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা বলছেন, ব্রিজ আমাদের দপ্তর কর্তৃক নির্মাণ হলেও এখন ব্রিজটির দুপাশেই এলজিইডি কর্তৃক সড়ক নির্মাণ করায় এটা তাদের আওতাধীন।

এক কথায় ভঙ্গুর ব্রিজটির সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না কোনো দপ্তরই। উভয় দপ্তরের দায়িত্ব সংক্রান্ত জটিলতায় ব্রিজ সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ না হওয়ার ফলে চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

শোভনালী ইউনিয়নের বসবাসরত জনসাধারণের একটি বৃহৎ অংশ উপজেলা শহরে যেতে ও নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ব্রিজ। এমনকি বাকড়া, সরাফপুর, কামালকাটি গ্রাম থেকে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই ব্রিজ পেরিয়ে লেখাপড়া করতে আসে কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বুধহাটা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা দেবহাটায় যাওয়ার ক্ষেত্রেও অন্যতম ব্রিজ এটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুসারে প্রায় প্রতিদিনই কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে। অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ হওয়ার পরেও প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেঙে পড়ে আছে এ ব্রিজটি। ভেঙে পড়ার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এই ব্রিজটি দেখতে যাননি বলেও অভিযোগ করেছেন নিত্যদিনের ভুক্তভোগীরা।
ব্রিজের গায়ে স্থাপিত নামফলক সূত্রে দেখা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মরিচ্চাপ নদীর ওপর ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ৭০ পয়সা টাকা ব্যয় করে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। সে হিসাব করলে দেখা যায় নির্মাণের পাঁচ বছর পূর্ণ করার আগে ভেঙে পড়েছে এই ব্রিজটি।

ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার ফলে শোভনালী ইউনিয়নের বাকড়া, শরাফপুর, কামালকাটি অন্যদিকে অপর প্রান্তের বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া, হাজিডাঙ্গা, শ্বেতপুর, বেউলা, পদ্ম বেউলা, নৈকাটি, পাইথালী ও চিলেডাংগা গ্রামের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। বিশেষ করে শোভনালী ইউনিয়ন অংশ থেকে অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, যাত্রীবাহী ইজিবাইক, ইঞ্জিনভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করতে না পারায় সব ধরনের পরিবহনকে এখন উপজেলা সদরে আসতে ঘুরে আসতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ। যার ফলে যেমন বেড়েছে পণ্যপরিবহন খরচ তেমনি জীবনের ঝুঁকি। বিশেষ করে হঠাৎ অসুস্থ হওয়া কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে পৌঁছাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই পাড়ের সংযোগ সড়কে লেগে থাকলেও মাঝের পিলার দুটি ভেঙে পড়ে ব্রিজটা ঝুলে আছে পানির ওপর। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই ব্রিজের মাঝের অংশ ডুবে থাকে পানির নিচে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কোনো নজর না থাকায় দুপাড়ের বাসিন্দরা স্বেচ্ছাশ্রমের কিছু রাবিশ, বালি আর ইটের খোয়া দিয়ে মাঝের ভাঙা অংশ ভরাট করে রেখে জোড়াতালি দিয়ে চলাচল করছেন এলাকাবাসী।

ব্রিজটি ভেঙে ঝুলে থাকার পরও অনেকটাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান ও ইজিবাইক। এক্ষেত্রেও যাত্রীবাহী ভ্যান ও ইজিবাইককে তাদের যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চালককে একাই পার হতে দেখা গেছে। অনেক সময় ব্রিজের মাঝ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে উঠতে গিয়ে কয়েকজন মিলে ধাক্কা দিতে হচ্ছে এসব পরিবহনগুলোর।
স্থানীয় দুপাড়ের বাসিন্দা ও নিত্যদিনের চলাচলকারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই ব্রিজ তাদের প্রতিদিনের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভেঙে পড়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি এমনটাই ক্ষোভ প্রকাশ করে এই ব্রিজটির স্থলে নতুন করে একটা নতুন ব্রিজ করার পাশাপাশি একটা ব্রিজ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কীভাবে ভেঙে গেল তা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ব্রিজটি আমাদের নয়, এটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাদের উপজেলা প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা সঙ্গে কথা বলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ভেঙে পড়া বৃষ্টি যদি তারা অপসারণ করে তাহলে আমারা ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের কাছে এখানে নতুন ব্রিজ করার জন্য চাহিদাপত্র পাঠাতে পারি। অপরদিকে প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা পিআইও মো. সোহাগ খান প্রতিবেদককে বলেন ব্রিজটি আমাদের অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মাণ করা হলেও এখন ব্রিজের দুপাশে এলজিইডি রাস্তা হওয়ার কারণে এটার দায়-দায়িত্ব এলজিইডির। ব্রিজ ভেঙে পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নদী খনন করার কারণে ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে।

এলজিইডি ও প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তার দপ্তরের ভিন্ন বক্তব্য হওয়ার কারণে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রনি আলম নুরের সঙ্গে আলাপকাল তিনি বলেন, এ বিষয়টি আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি। কোনো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার আমাকে বলেনি। এখন আমি জানতে পেরেছি, দ্রুত উভয় দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জনদুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *