সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা কাস্টমস হাউস
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও ঢাকা কাস্টম হাউসে পুকুর চুরি হয়েছে। এই গুদাম থেকেই প্রায় ৪ হাজার ৭৩০ ভরি (৫৫ কেজি) স্বর্ণ উধাও হয়ে গেছে। এসব স্বর্ণের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সম্প্রতি কাস্টম হাউসে নতুন গুদাম কর্মকর্তা দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে স্বর্ণ উধাও হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। সে সময় ছয়টি ডিটেনশন মেমোর (ডিএম) বিপরীতে স্বর্ণের ছয়টি বার পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। উদ্যোগ নেয় গুদামে থাকা পণ্যের তালিকা মেলানোর। আর এতেই ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে এলো।
গত ২২ আগস্ট দৈনিক কালবেলায় ‘কাস্টমসের গুদাম থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণ উধাও’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নামে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। গুদামের ভেতরে একটি লকারের হাতল ভাঙা পাওয়া গেছে এবং স্বর্ণভর্তি কয়েকটি কার্টনের সন্ধান মিলছে না বলে ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়।
ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম কেলেঙ্কারির সূত্রপাত গত ২০ আগস্ট। নতুন গুদাম কর্মকর্তা দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময় ছয়টি ডিটেনশন মেমোর (ডিএম) বিপরীতে স্বর্ণের ছয়টি বার পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানান। এ কারণে আগের গুদাম কর্মকর্তার বদলি আদেশ স্থগিত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দৈনিক কালবেলায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ গুদামের মালপত্র তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়। এর ফলে বেরিয়ে আসে কাস্টমসের ইতিহাসে স্বর্ণ চুরির ভয়াবহ ঘটনা।
প্রশ্ন উঠেছে, সুরক্ষিত গুদাম থেকে কীভাবে এত স্বর্ণ গায়েব হয়ে গেল। কারা ঘটাল এই ভয়াবহ চুরি। সাধারণত গুদাম কর্মকর্তা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ যেসব কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকেন, তারা ছাড়া অন্য কারও সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। এমন একটি সুরক্ষিত গুদাম থেকে এত বড় চুরির ঘটনায় অবাক খোদ কাস্টমস কর্মকর্তারাও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ কালবেলাকে বলেন, গত ২২ আগস্ট কালবেলায় নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর আমি তালিকা মেলানোর নির্দেশ দিই। একই সঙ্গে চার শিফটে চারজন করে কর্মকর্তাকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কী পরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৫ কেজির বেশি স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো কার্যক্রম শেষ হলে প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় আমরা ফৌজদারি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছি। আর গুদাম ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার জন্য একজন যুগ্ম কমিশনারের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে চারজন উপকমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন গুদাম কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত প্রতিটি কাস্টম হাউসে গুদাম থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে ছয় মাস অন্তর অন্তর অভ্যন্তরীণ বদলি কার্যক্রম চলমান থাকে। ঢাকা কাস্টম হাউসেও এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। আর গুদাম কর্মকর্তারা সব পণ্য বুঝে নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদন থাকে। আগের গুদাম কর্মকর্তা গত জানুয়ারি মাসে নতুন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম সাহেদকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। সাহেদ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি দুজনকে গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। তারা মালপত্র বুঝে না পাওয়ায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পণ্য বুঝিয়ে দিতে না পারায় সাবেক গুদাম কর্মকর্তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটেছে।(খবর: কালবেলা)