অনলাইন ডেস্ক
অভিবাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার সন্ধ্যায় সাইপ্রিয়ট বন্দর শহর লিমাসোলে শত শত মানুষ ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। ছবি : পিকচার অ্যালায়েন্স/কোসটাস পিকোলাস/জুমা প্রেস
দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসের পশ্চিমাঞ্চলে গত সপ্তাহে শুরু হওয়া অভিবাসীবিরোধী ও বর্ণবাদী সহিংসতা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর লিমাসোলেতে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। লিমাসোলেতে অভিবাসীদের মালিকানাধীন দোকানপাটে ভাঙচুর করা হয়েছে। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত এশিয়া থেকে যাওয়া চালকদেরও আক্রমণের শিকার হতে হয়।
শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া সহিংসতা রবিবার ভোর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যায় লিমাসোলে শত শত মুখোশধারী ব্যক্তি অভিবাসীদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে এবং অভিবাসীদের আক্রমণ করে। এদিন প্রায় ৫০০ মানুষ দল বেঁধে লিমাসোলে তাণ্ডব চালায়। বিদেশি মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রিক সাইটপ্রিয়টদের মতো দেখতে নয় এমন মানুষদের ওপর তারা চড়াও হয়।
শনিবার থেকে রবিবারের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনজন ব্যক্তিকে আক্রমণ করা হয়েছে এবং তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে। এ ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের ওপর আক্রমণ করা মুখোশধারী ব্যক্তিরা অতিডানপন্থী।
সাইপ্রিয়ট প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডোলিডিস হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যা ঘটেছে তার জন্য তিনি লজ্জিত।
অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার সন্ধ্যায় সাইপ্রিয়ট বন্দর শহর লিমাসোলে শত শত মানুষ ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় ‘ফ্যাসিবাদকে ভেঙে দাও, লিমাসোলে এবং সবখানে’ বলে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। রবিবার সাইপ্রিয়ট রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরইকে জানিয়েছে, বিক্ষোভ মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইপ্রাসে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব ও অসামাজিক আচরণ বেড়ে চলেছে।
এর আগে এমন ঘটনা শুধু ফুটবলকে কেন্দ্র করে এবং পর্যটকদের মাতলামির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
এর আগে সাইপ্রাসের পশ্চিমে আশ্রয়প্রার্থী অধ্যুষিত ক্লোরাকাস গ্রামে স্থানীয়দের সঙ্গে অভিবাসীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজধানী নিকোসিয়া থেকে ৯৬ মাইল পশ্চিমের গ্রামটিতে সংঘর্ষের পর ২৮ আগস্ট গভীর রাতে অভিবাসী ও স্থানীয় মিলিয়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
২৭ আগস্ট অভিবাসনবিরোধী আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ওই গ্রামে থাকা অভিবাসীরা। সেদিন নিজেদের পরিচয় আড়াল করে একটি দল অভিবাসীদের মালিকানাধীন সম্পদ নষ্ট ও গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ বলছে, সেই ঘটনার জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দেশটির নীতিনির্ধারকরা বলে থাকেন, অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে রয়েছে এই দ্বীপ দেশটি। তবে চলতি বছর দেশটিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের হার কমেছে।
১৯৬৩ সালে শুরু হওয়া গ্রিক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং ১৯৭৪ সালে তুর্কি আক্রমণের কারণে দুই লাখেরও বেশি মানুষ সংকটে পড়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফলে সাইপ্রাসেই প্রচুরসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে। সংঘর্ষের পর তাড়াহুড়া করে বানানো সরকারি আবাসনে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ বসবাস করে।
শনি ও রবিবারের সহিংসতার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের পোস্ট করা ভিডিও ও ছবি দেখে জানা গেছে, কুয়েত থেকে আসা পর্যটকরাও আক্রমণের শিকার হয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক কিরিয়াকোস কোরোস বলেন, ‘পর্যটকরা আক্রমণের শিকার হলে শনিবার একটি আরবদেশের রাষ্ট্রদূত প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’ তবে কোন দেশের রাষ্ট্রদূত প্রতিবাদ জানিয়েছেন তা অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক কিরিয়াকোস এক্সে (টুইটার) একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি দল সাইপ্রাস ছেড়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজনকে হুইলচেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়।
কিরিয়াকোস ছবির সঙ্গে লিখেছেন, ‘তারা তাদের সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন। আমার মনে হয় তারা আর কখনো এখানে আসবেন না।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনার জন্য আমি প্রথমবারের মতো এতটা বিব্রত বোধ করেছি। এটি সেই সাইপ্রাস নয়, যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, বড় হয়েছি, পরিবার আছে, আমি বৃদ্ধ হয়েছি।’
সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস