সুবর্ণবাঙলা রিপোর্ট
জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দিয়ে জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য করার অভিযোগ এনেছেন সরকারের ১০৫ জন উপসচিব। একই সঙ্গে সিনিয়রটি মেনে পদোন্নতির দাবি তুলেছেন তারা। এ সংক্রান্ত একটি আবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠিয়েছেন তারা। এই আবেদনের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্যসচিবসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
আবেদনপত্রে তারা উল্লেখ করেন, পদোন্নতির সব যোগ্যতা ও শর্ত থাকা সত্ত্বেও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি না দিয়ে ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছেন তারা। বলেন, আমাদের নিয়মিত ব্যাচের যখন যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি হয়, তার পূর্বেই অথবা সেই সময় আমরা অনেকেই উক্ত পদে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছি। অথচ আমাদেরকে নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, পরবর্তী অনেকগুলো জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাগণ যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ আমাদেরকে এখনো পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি। এভাবে ক্রমাগত আমাদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রাপ্য পদোন্নতি হতে অজ্ঞাত কারণে বারংবার বঞ্চিত হওয়ায় আমরা মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছি। চিঠিতে তারা উচ্চ আদালতের রায়সহ এবং পদোন্নতির বিভিন্ন বিধিমালা উল্লেখ করেন।
চিঠিতে তারা বলেন, পদোন্নতির ভিত্তি হবে মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত একটি ব্যাচের সম্মিলিত তালিকাই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি। সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২ অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত শর্তাবলি প্রতিপালনসাপেক্ষে প্রত্যেকে নিয়মিত ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন, উপসচিব পদে অন্যূন পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা। উপসচিব পদে অন্যূন তিন বছর চাকরিসহ ক্যাডার পদে অন্যূন ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা স্ব-স্ব ব্যাচের সঙ্গে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করায় আমাদের উক্ত ব্যাচের সাথেই পদোন্নতি প্রাপ্য। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা এবং বিসিএস সিনিয়রিটি রুলস ১৯৮৩ লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতা হরণপূর্বক আমাদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন সচিবের কাছে আবেদন করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ যুগ্মসচিব পদোন্নতির আদেশে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের মোট ১৮০ জন পুলভুক্ত উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের মেধা তালিকার সর্বশেষ কর্মকর্তা (ক্রমিক নং-৩০০ ও আইডি নং-১৫৫০০) এবং সাবেক ইকোনমিক ক্যাডার হতে প্রশাসন ক্যাডারে মার্জ হওয়া ২২তম ব্যাচের মেধা তালিকার সর্বশেষ কর্মকর্তাও (আইডি নং-২০৪১৪) পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। প্রশাসন ক্যাডার থেকে পুলভুক্ত না হওয়ার কারণে সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্যাডারের সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাদের (১৩তম থেকে ২১তম ব্যাচ) এবং এমনকি ২২তম ব্যাচের কোন কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে আমাদের জ্যেষ্ঠতা হরণ করা হয়েছে এবং ক্যাডার/শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিধিবিধান উল্লেখ করে অতি দ্রুত যার যার নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা প্রদানপূর্বক যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানান এই ১০৫ জন উপসচিব।