বরিশাল প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাম্মী আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাম্মী আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভাস্থলে প্রবেশের সময় বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ ও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত সিরাজ সিকদার বরিশালের হিজলা উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কোব্বাত সিকদারের ছেলে। পঙ্কজ ও শাম্মী উভয়ের অনুসারীরাই সিরাজকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক বলেন, ‘মৃত সিরাজকে যিনি হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তিনি জানিয়েছেন— সিরাজ জনসভার মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছে।’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের অনুসারীরা বলছেন, বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের লোকজনের হামলায় আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সিরাজ সিকদার নামে ওই ব্যক্তি। আর পঙ্কজ নাথের অনুসারীরা বলছেন, শাম্মী আহমেদের লোকজনের হামলায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভুট্টো মোল্লা বলেন, ‘মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে ঢুকছিলাম। আগে থেকে অবস্থান নেওয়া শাম্মী অনুসারীরা আমাদের বোতল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সিরাজসহ ১৫ জনকে আহত করে তারা। এর মধ্যে সিরাজ নিহত হয়েছেন।’
মেহেন্দিগঞ্জের বদরপুরের মোটরবাইক সমিতির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা পঙ্কজ নাথের ঈগল প্রতীকের মিছিল নিয়ে ব্রিজ পার হয়ে মাঠের মধ্যে ঢুকেছি, তখন কাছাকাছি ছিল শাম্মী আহমেদের লোকজন। তারা প্রথমে আমাদের বোতল নিক্ষেপ করে এবং পরবর্তীতে ফেস্টুনের সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আমাদের ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন এবং একজন মারাও গেছেন। আমরা এর বিচার প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি করছি।’
শাম্মীর অনুসারী হিজলা উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘সিরাজ সিকদার জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আমাদের সঙ্গেই আসেন। তিনি গুয়াবাড়িয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি। পঙ্কজ নাথের লোকজন জনসভাস্থলে আসার পর হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটে। আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি, তার গায়ে আঘাত লাগে এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। সিরাজ সিকদার ছাড়া ওই হামলায় আমাদের আরও ৪-৫ জন আহত হয়েছেন।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কবির উদ্দিন জানান, ‘একজনকে নিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তবু সন্দেহের কারণে আমরা মরদেহ মর্গে পাঠিয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
জনসভা থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।