সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর প্রচারে শনিবার দুই দফায় হামলা, গুলি ও ভাঙচুর হয়েছে। এতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ এবং হুইপের ভাই-বোনসহ অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছেন। দুপুরে উপজেলার শান্তিরহাট এবং বিকালে কুসুমপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হুইপের গাড়িসহ ৬টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার জন্য নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে দায়ী করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সহিংসতায় আরও ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার ডেমরায় ১৫, ফেনীর সোনাগাজীতে ৪, চুয়াডাঙ্গায় ২, শেরপুরে ২ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও নওগাঁয় একজন করে আহত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনি অফিস ও কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম ও পটিয়া : স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার বেলা ১২টায় হুইপের গাড়িবহর গণসংযোগে বের হয়। তারা শান্তিরহাট বাজার অতিক্রম করার সময় নৌকার স্লোগান দিয়ে ১৫-২০ জন গাড়িবহরে হামলা চালায়। হুইপকে বহনকারী গাড়িতেও হামলা চালায় তারা। মাইক্রোবাস ও কার থেকে নামিয়ে হুইপের সমর্থকদের মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় ৪টি গাড়ি। এ সময় হুইপের ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বতের মাথা ফেটে যায়। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। একই ঘটনায় নাজমা আক্তার, বেলাল চৌধুরী, আরিফ, আবু তৈয়ব, রিমন, মিনহাজ উদ্দিন, মানিক ও ইউপি সদস্য সালাহউদ্দিন সরওয়ার আহত হয়েছেন।
বিকাল ৫টায় কুসুমপুরা ২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগের একপর্যায়ে দা-কিরিচ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে নৌকার স্লোগান দিয়ে ৫০-৬০ জন আবারও হামলা করে। এ সময় পেছন থেকে হুইপের গাড়িতে গুলি করা হলে তার গাড়ির পেছনের গ্লাস ফুটো হয়ে যায়। গণসংযোগে থাকা ঈগলের কর্মী-সমর্থকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ও হামলা করা হয়। এতে ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ মনির ও মো. ইদ্রিসের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া হুইপের বোন রেখা চৌধুরীসহ আরও ১৭ জন আহত হয়েছেন। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে সন্ধ্যায় হুইপ পটিয়ার আমজুর হাটে নির্বাচনি কার্যালয়ে অবস্থান নিলে মোটরসাইকেলবহর নিয়ে সন্ত্রাসীরা তার কার্যালয়েও হামলার চেষ্টা করে। তবে সেখানে শত শত কর্মী-সমর্থক থাকায় নৌকার সমর্থকরা একটি গাড়ি ভাঙচুর করে সটকে পড়ে।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ কর্মসূচি চলাকালে সন্ত্রাসীরা আমার গাড়ির পেছনে গুলি করে। আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন অভিযোগ করেন, প্রচারণার শুরু থেকেই নৌকার লোকজন আমাদের সমর্থকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। শনিবার দুই দফায় হামলায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ২৮ জন আহত হয়েছেন। ৬টি যানবাহন ভাঙচুর করেছে তারা।
হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে নৌকার প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক প্রদীপ দাশকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
ডেমরা (ঢাকা) : প্রত্যক্ষদর্শী ও ডেমরা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকালে ডিএসসিসির ৬৭নং ওয়ার্ডের দারুন্নাজাত মাদ্রাসাসংলগ্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্প থেকে একটি মিছিল বের হয়। ওই মিছিলে পার্শ্ববর্তী সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আদর্শনগর থেকে বেশকিছু ছেলে যোগদান করে। পরে মিছিলের মধ্যেই অংশগ্রহণকারী দুই গ্র“পের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে সংঘর্ষ, হামলা-পালটা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে এ সময় একজনকে ছুরিকাঘাত এবং ৩ জনকে রামদা দিয়ে কুপানো হয়। ডেমরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
শেরপুর : সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা গ্রামে শুক্রবার রাতে নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রার্থীর দুই সমর্থককে রড ও বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তারা হলেন রঘুনাথপুর চক নাওভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে রফিক মিয়া ও রঘুনাথপুর ছয়ঘড়িপাড়া গ্রামের আহাদ উদ্দিনের ছেলে আলতাফ হোসেন। আহতরা জানান, রাত ১০টায় কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া বাজারে ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনি পথসভায় যোগ দিতে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পথে নাওভাঙ্গায় নৌকা প্রতীকের কয়েকজন সমর্থক তাদের গতিরোধ করে লোহার রড ও বাঁশ নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পিটিয়ে রফিকের হাত-পা ভেঙে দেয়। চোখ ও মাথায় গুরুতর আঘাত পান আলতাফ। পরে স্থানীয়রা তাদের শেরপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নওগাঁ : আত্রাই উপজেলা সদরের সাহেবগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকায় শনিবার সকাল ১০টায় নওগাঁ-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক সুমনের পক্ষে প্রচারের সময় একজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তিনি হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য চৌধুরী গোলাম মোস্তফা। এ সময় স্থানীয়রা শামীম হোসেন ওরফে সানী নামে একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা : আলমডাঙ্গার জোড়গাছা গ্রামে শনিবার সকালে ঈগল ও ফ্রিজ প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় নৌকার সমর্থক উপজেলার নাগদহ ইউনিয়নের সদস্য আনিছুর রহমান ও স্ত্রী জেসমিন খাতুন আহত হয়েছেন। জেসমিন খাাতুনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোনাগাজী (ফেনী) দক্ষিণ : উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের কাজিরহাট বাজার ও আউরারখিল গ্রামে শুক্রবার রাতে লাঙ্গলের মিছিলে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে ৪ জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন মো. সৌরভ, মো. শাকিব, মনির হোসেন ও আব্দুল কাদের।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) : নেওয়াজপুর ইউনিয়নের দানা মিয়ার বাজারে শুক্রবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন শাহিনের পথসভার গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার চিত্রধারণ করায় এক টিভি ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ সময় হামলাকারীরা তার ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। আহত ক্যামেরাপারসনের নাম ইমরান হোসেন। সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এদিকে শুক্রবার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের গাবুয়া বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন জনি ও জুয়েল।
নাজিরপুর (পিরোজপুর) : নৌকার এক কর্মীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে শনিবার নাজিরপুর থানায় মমালা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, শুক্রবার রাতে নৌকার প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার পথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী উজ্জল হালদার, পংকজ বেপারীসহ ৪-৫ জন তাকে আটকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে তার ডাক-চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়।
রাণীনগর (নওগাঁ) : রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বগারবাড়ি বাজারে শুক্রবার রাতে নৌকার নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও চেয়ার ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
হোমনা (কুমিল্লা) : কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ট্রাক) কর্মী-সমর্থকের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে হোমনা থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী দুলালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাঘার ছেলে আনোয়ার হোসেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : পৌর এলাকার শংকরবাটি ঈদগাহের পাশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থীর নির্বাচনি অফিসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ফরিদপুর : কানাইপুর ইউনিয়নের কানাইপুর বাজারের কাছে শুক্রবার রাতে নৌকার নির্বাচনি অফিসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায় নৌকার তিনটি ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়েছে।