মানসম্মত শিক্ষা

জাতীয় শিক্ষা-গবেষণা ও ক্যাম্পাস

পিআইবি ফিচার

কামরুন-নাহার-মুকুল

দার্শনিক প্লেটো বিশ্বাস করতেন একটি সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষা অপরিহার্য। তাঁর মতে, ‘Education is indispensable for the economic health of a good society’। সাধারণ অর্থে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের মধ্যে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ তৈরি করে, যা ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের একটি লক্ষ্য হিসাবে মানসম্মত শিক্ষাকে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জতিসংঘের উদ্যোগে সব মানুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে একটি অধিকতর টেকসই ও সুন্দর বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সর্বজনীন একগুচ্ছ সমন্বিত কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এতে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এমডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে ঘাটতি রয়েছে, তা এসডিজির মাধ্যমে পূরণ হবে এবং মানবকল্যাণে আরও কিছু নতুন মাত্রা যোগ হবে।
১৭টি অভীষ্টের একটি মানসম্মত শিক্ষা। এর মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যথার্থ, মানসম্মত ও ফলপ্রসূ শিক্ষা নিশ্চিত করা।
২০৩০ সালের মধ্যে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে শৈশব বিকাশ, যত্ন ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী করে গড়ে তোলা।
২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষ সবার জন্য কারিগরি বৃত্তিমূলক এবং উচ্চতর এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা।
কর্মসংস্থান, ভালো চাকরি কিংবা উদ্যোক্তা তৈরিতে ২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতাসম্পন্ন যুব ও প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা পর্যাপ্ত হারে বাড়ানো।
২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা। সব ধরনের শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অসহায়, অক্ষম ব্যক্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং অরক্ষিত পরিস্থিতিতে থাকা শিশুদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
২০৩০ সালের মধ্যে যুবসহ পর্যাপ্ত হারে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের সাক্ষরতা ও সংখ্যাজ্ঞান নিশ্চিত করা।
টেকসই উন্নয়নে সব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করা। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রা, মানবাধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতি, বৈশি^ক নাগরিকত্ব, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং টেকসই উন্নয়নে সংস্কৃতির ভ‚মিকা সম্পর্কে জ্ঞাপন ও দক্ষতা অর্জন।
শিশু, অক্ষম এবং লিঙ্গ সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা-কাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা। সবার জন্য নিরাপদ, অহিংস, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কার্যকর শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা।
এছাড়াও ছোটো দ্বীপরাষ্ট্র ও আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য রয়েছে আরও দুটি অনুচ্ছেদ।
এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষার অবস্থান চতুর্থ স্থানে। লক্ষ্য অর্জনে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সাক্ষরতার হার উল্লেখযোগ্য বেড়েছে এবং এটা ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৭.৭ শতাংশ।
এছাড়া সরকার কারিগরি শিক্ষায়ও গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ১৬ শতাংশ। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার নতুন কারিকুলাম হাতে নিয়েছে, সেই সঙ্গে চলছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ। একই সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পাঠ্যসূচি উন্নয়নে কাজ করছে।
বাংলাদেশে আয়তনের তুলনায় বিশাল জনসংখ্যা, যা কেবল মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত করলেই বিশ্ববাজারে সমাদৃত হবে। তাই কোনো দেশের অনুকরণের ক্ষেত্রে হতে হবে সাবধানি। ভবিষ্যতের প্রত্যয়ী শিক্ষার্থী গড়ার পদক্ষেপই আমাদের জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির বিকাশে প্রধান নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, তাই শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বড়ো অন্তরায় হলো নকল, প্রশ্ন ফাঁস, সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও দুর্নীতি; যা শিক্ষাকে একটা ব্যবসায় পরিণত করছে। তাই এগুলোকে শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হতে পারবে।

(পিআইবি ফিচার)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *