বিজিএমইএ নির্বাচনে দুটি প্যানেলের শক্ত প্রতিদ্বন্ধিতা

অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয় রাজনীতি

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল ও ফোরামের প্যানেল।

আগামী ৯ মার্চ পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে নির্বাচন। সাধারণ ভোটাররা নতুন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে মুখিয়ে আছেন। এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫টি পরিচালক পদে নির্বাচন কেন্দ্রিক দুই প্যানেল বা জোট সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের ৭৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। বিজিএমইএর নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত করতে এবারও প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এবার সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার হিসেবে আছেন এসএম মান্নান কচি। তিনি বর্তমানে বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি। এর আগেও কয়েক মেয়াদে তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন তিনি।

অন্যদিকে ফোরামের প্যানেল লিডার হলেন ফয়সাল সামাদ। তিনি বিজিএমইএর পরিচালক পদে আছেন। এর আগে একবার সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্মিলিত পরিষদের পক্ষে কাজ শুরু করেছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান, টিপু মুনশি, সালাম মুর্শেদী, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও মো. আতিকুল ইসলামসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে, ফোরামের প্যানেলের পক্ষে মাঠে রয়েছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি রুবানা হক, আনোয়ারুল আলম পারভেজসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। মূলত এই প্যানেলটির নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তাঁর হাত ধরে ফোরাম পোশাকখাতে শক্তিশালী অবস্থান করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে সম্মিলিত পরিষদের হয়ে এক সময় বিজিএমইএ’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অর্থাৎ নির্বাচনে দুটি প্যানেলই শক্ত প্রতিদ্বন্ধিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিজিএমইএর ২০২৪-২৬ সাল মেয়াদের নির্বাচন বোর্ড সম্প্রতি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের ৭৯ জন প্রার্থী ৮১টি মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে দুই প্যানেলের লিডারই দুটি করে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। ঢাকার ২৬ ও চট্টগ্রামের ৯ পদের বিপরীতে সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী যথাক্রমে ৩০ ও ৯ জন। অন্যদিকে ঢাকায় ফোরামের ২৮ ও চট্টগ্রামে ১২ জন প্রার্থী রয়েছে। এদিকে, আজ বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন উভয় প্যানেল থেকে পদসংখ্যার সমান প্রার্থী রেখে বাকিদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এর আগে ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছিল। পরেরবার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। সর্বশেষ গত ২০২১ সালের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ২৪টিতে জয়ী হয়। আর এবিএম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ফোরাম ১১ পরিচালক পদে বিজয়ী হয়। সভাপতি হন ফারুক হাসান। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় বর্তমান তিনিই সংগঠনটির দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ৯ মার্চ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নতুন পরিচালনা পর্ষদ পাবে বিজিএমইএ। সেই কমিটি আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবে।

এবারের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন তুসুকা ফ্যাশনসের আরশাদ জামাল, ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের শহিদউল্লাহ আজিম, টিম গ্রুপের আবদুল্লাহ হিল রাকিব, বিটপি গ্রুপের মিরান আলী, উর্মি গার্মেন্টসের আসিফ আশরাফ, স্প্যারো অ্যাপারেলসের শোভন ইসলাম, শাশা গার্মেন্টসের শামস মাহমুদ, ডেনিম এক্সপার্টের মহিউদ্দিন রুবেল প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, সম্মিলিত পরিষদ নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পোশাক শিল্পের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলায় এই পরিষদ সব সময় উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে। নির্বাচনে বিজয়ী হলে সবাইকে নিয়েই কাজ করা হবে। আমরা যারা ব্যবসায়ী, তাদের মূল উদ্দেশ্য দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথ ধরে পোশাক শিল্পখাত দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করছি।

এছাড়া ফোরামের হয়ে যারা নির্বাচন করছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এটিএস অ্যাপারেলসের মোহাম্মদ আবদুস সালাম, নিউ এইজ গ্রুপের আসিফ ইব্রাহিম, অনন্ত গার্মেন্টসের ইনামুল হক খান, দেশ গার্মেন্টসের ভিদিয়া অমৃত খান, কেডিএসের সেলিম রহমান, কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রির শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, ফ্যাশন ডট কমের খান মনিরুল আলম প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে প্যানলে লিডার ফয়সাল সামাদ জানিয়েছেন, ফোরাম নির্বাচনের প্রস্তুতিতে রয়েছে। তবে ভোটার তালিকা আরও সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। সেলক্ষ্যে ফোরাম থেকে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, প্রকৃত ভোটাররাই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। নির্বাচিত হলে তিনিও সবাইকে নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এবারের নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৫৬৩ জনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৪২৯ জনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বোর্ডে আবেদন করেন ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তার অভিযোগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইট তল্লাশি করে দেখা গেছে, এই ভোটারদের আয়কর প্রদানের হালনাগাদ তথ্য নেই। তখন বিষয়টি নিয়ে আপিল বোর্ড শুনানি করে। পরে ৬৭ জন ভোটার বাদ পড়েন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় এখন আছেন ঢাকার ২ হাজার ৩২ ও চট্টগ্রামের ৪৬৪ জন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলামিন জানিয়েছেন, আপিল বোর্ড প্রাথমিক তালিকা থেকে যাদের বাদ দিতে বলেছে, আমরা তাদের বাদ দিয়েছি। এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীরা ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করছেন এ খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *