সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন অভিনেত্রী শাহানুর ও নিপুণ
জাতীয় নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত নারী আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধ শুরুর দিন মঙ্গলবার প্রথম দিনেই ৮১০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলটি আয় করেছে ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নারী নেত্রীদের পাশাপাশি শিল্পী-অভিনেত্রী, সংস্কৃতকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সেলিব্রেটিরাও আগামী পাঁচ বছরের জন্য সংসদ সদস্য হওয়ার আশায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা গ্রহণের কর্মযজ্ঞ। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এবার ৪৮টি আসনে মনোনয়ন দেবেন। বাকি দুটি আসন পাবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার প্রথম দিনেই ছিল দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পদের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে আসা সমর্থকদের মিছিল ও স্লোগানে গোটা এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, বেলা ১১টার কিছু পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। বিভিন্ন তলায় স্থাপিত বুথগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। আমাদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের পর থেকেই পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। জেলা সফরে গিয়েও যোগ্য কাউকে দেখলে তার নাম লিখে রাখেন। সময়মতো সেটা কাজে লাগান।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আটটি বিভাগের জন্য আটটি বুথ খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ™ি^তীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সকল বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আসা-যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বাঁশ দিয়ে ঘিরে ভেতরে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ফরম বিতরণ ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়ন আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৪ মার্চ ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। তফসিল ঘোষণার দিনই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি দু’দিন মিলিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মোট সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশিতে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম দিনেই আয় ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা ॥ প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষে বিকেল পাঁচটায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান জানান, সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য প্রথম দিনে ৮১০টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের নির্ধারিত মূল্য ছিল ৫০ হাজার টাকা। ফলে প্রথম দিনে ফরম বিক্রি বাবদ দলের আয় হয়েছে চার কোটি পাঁচ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, প্রথম দিনে বিক্রি হওয়া ৮১০টি ফরমের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৯টি, সিলেট বিভাগে ২৬টি, বরিশাল বিভাগে ৫৬টি, খুলনা বিভাগে ৫৭টি, রংপুর বিভাগে ৭৫টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৯০টি ফরম বিক্রি হয়েছে।
তারকা-সেলিব্রেটিরাও মনোনয়ন যুদ্ধে : প্রথম দিনেই সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতের কমপক্ষে আটজন সেলিব্রেটি তারকা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তারা হচ্ছেন- চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনুর, শামীমা তুষ্টি, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, নাট্যাভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সোহানা সাবা, তানভিন সুইটি উল্লেখ যোগ্য।
মনোনয়ন ফরম কেনার পর অপু বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, আমি যেহেতু একজন অভিনেত্রী, আমি সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম। আমি বরাবরই নারীদের উন্নয়ন করতে চাই। সেই জায়গা থেকেই যদি আমাকে সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমি মানুষের জন্য কাজ করব। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আশীর্বাদ করবেন আমি যেন লক্ষ্য পূরণ করতে পারি
অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর বলেন, বিশ^বিদ্যালয় জীবন থেকেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই আমি অনেক আশাবাদী। যেহেতু আমার রাজনীতির ক্যারিয়ার অনেক লম্বা। এলাকাসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। মনোনয়ন পেলে কাজের পরিধি আরও লম্বা হবে।
সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনুর বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বিরোধীদলের আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে মাঠি ছিলাম। আমি নিজেও সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করলে আমি তার কথা অনুসারে কাজ করতে চাই। এছাড়া নারীদের জন্যও কাজ করতে চাই।
সোহানা সাবা বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি শুধু আওয়ামী লীগপন্থ্ইি ছিলেন না, দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশের কথা ভাবলে আওয়ামী লীগের কথা ছাড়া অন্য কোনো কিছু ভাবার উপায় নেই। সেজন্যই আমি আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চাই।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌস আহমেদ ও মমতাজ বেগম। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। এর মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর ও ফেরদৌস আহমেদ বিজয়ী হলেও বাকিরা বিজয়ী হতে পারেনি।