সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক
‘…আগে আগে অনেকে নাকি বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের দুপুরে এ-মাঠ পার হতে গিয়ে সত্যি প্রাণ হারিয়েছে, গরম বালির ওপর তাদের নির্জীব দেহ লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।…আধক্রোশটাক পথ চলে উলুখড়ের বনটা ডাইনে ফেলেই দেখলেন, বোধহয় আর আধক্রোশ পথ দূরে একটা বড়ো বটগাছ।…বটতলায় পৌঁছে দেখলেন একটা জলসত্র। চার-পাঁচটা নতুন জালায় জল, একপাশে একরাশি কচি ডাব! এক ধামা ভিজে ছোলা, একটা বড়ো জায়গায় অনেকটা নতুন আখের গুড়, একটা ছোটো ধামায় আধ ধামা বাতাসা! … একজন জালা থেকে জল উঠিয়ে চেরা বাঁশের খোলে ঢেলে দিচ্ছে। আর লোকে বাঁশের খোলের এ-মুখে অঞ্জলি পেতে জল পান করছে।’
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা গল্পটির নাম জলসত্র। অনেকেই নিশ্চয় পড়েছেন এই গল্প। নিশ্চয় মনে আছে মাধব শিরোমণি মশাই যাচ্ছিলেন শিষ্যবাড়ি। প্রকাণ্ড এক মাঠ পেরনোর সময় তৃষ্ণায় তাঁর গলার ছাতি শুকিয়ে কাঠ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল! আজ সারা রাজ্যে যখন তীব্র দাবদাহ চলছে, তখন শরীর ঠান্ডা রাখতে না পারলে বিপদ বইকি। অতএব আসুন নিজেরাই নিজেদের জন্য জলসত্রের ব্যবস্থা করি। এমন কিছু খাদ্য আর পানীয় রাখি যা খেলেই শরীর হবে শীতল আর শান্ত।
লেবুর শরবত: একগ্লাস জলে আধখানা পাতি লেবুর রস, এক চিমটে নুন আর এক চামচ চিনি দিয়ে তৈরি লেবুর শরবত কয়েক প্রজন্ম ধরে বাঙালিদের দু’দণ্ড শান্তি দিয়ে আসছে। লেবুর শরবতের উপকরণ সামান্যই। বাড়িতে লেবু, চিনি না থাকলে বাতাসা দিয়েও জলপান করা যায়।
লস্যি: সুগারের রোগী? মিষ্টি শরবত খাবেন কীভাবে, তাই ভাবছেন? চিন্তা নেই। ৫০ গ্রাম দই, এক চিমটে নুন, সামান্য চাট মশলা ও গন্ধরাজ লেবুর রস একগ্লাস জলে মিশিয়ে পান করুন। শরীর মন জুড়িয়ে যাবে। শুধু সুগার নয়, সুস্থ মানুষও পান করতে পারেন লস্যি। এক চামচ চিনিও দেওয়া যায়।
ছাতুর শরবত: খর বেলায় গাছের ছায়ার মতো শান্তি দিতে পারে ছাতুর শরবত। এক গ্লাস জলে দুই থেকে চার চামচ ছাতু, এক চিমটে নুন, এক চামচ চিনি মিশিয়ে পান করুন। প্রোটিন আর ফাইবারে পূর্ণ ছাতু পেট ভরাবে। এনার্জিও পাবেন। ডায়াবেটিকরা চাইলে চিনি নাও মেশাতে পারেন।
পান্তা ভাত: নৈশভোজের জন্য বেঁচে যাওয়া ভাতে জল দিয়ে রেখে পরের দিন লবণ, কাঁচালঙ্কা, পিঁয়াজের তরিবতে সকালে আর দুপুরের ফাঁকে পড়ে থাকা বেলায় গ্রহণীয় অন্নকেই পান্তা বলে। গেঁজে যাওয়ার কারণে পান্তায় ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা যায় বেড়ে, এছাড়া পান্তাভাতে থাকে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো উপকারী খনিজ। ফলে স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী পান্তা। হজমেও বেগ পেতে হয় না, ত্বকের জন্যও ভালো। পান্তার সেবন দিতে পারে নিশ্ছিদ্র ঘুমের সন্ধান। পান্তা শরীরে জলের জোগান বজায় রাখে। ফলে ডায়ারিয়া, ডিহাইড্রেশন হয় না।
কার্ড রাইস: বাঙালিরা দই ভাত খেতে ভালোবাসে। তবে তার মধ্যে বিশেষ কোনও মশলা যোগ করার রীতি নেই। দক্ষিণ ভারতীয় কার্ড রাইসে সামান্য হলেও মশলা যোগ করা হয়। চাইলে আপনিও বাড়িতে কার্ড রাইস করতে পারে। এক্ষেত্রে ভাতের মধ্যে দই, একটু চাট মশলা, স্বাদমতো নুন দিয়ে মিশিয়ে নিন। চাইলে একবার মিক্সিতে ঘুরিয়েও নিতে পারেন। তাতে ভাতের দানা ভেঙে মিহি হয়ে যাবে।
এবার কড়াইয়ে সামান্য তেল দিয়ে তার মধ্যে একচামচ গোটা সর্ষে, শুকনো বা কাঁচালঙ্কা আর কারিপাতা দিয়ে ভেজে নিন। এই মশলা ভাতের উপর ছড়িয়ে দিন। পরিবেশন করুন। ছোট বড় সকলের শরীর আর পেট ঠান্ডা রাখতে পারে কার্ড রাইস।
আরও: খেতে পারেন কাঁচা আম দিয়ে বানানো টক ডাল। সর্ষে ফোড়ন দিয়ে কাঁচা আমের ঝোল করতে পারেন। পাঁচ রকম সবজি দিয়ে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। পাতে রাখুন সজনে ডাঁটা, সজনে ফুলের তরকারি।
এড়িয়ে চলবেন কী কী?
১. দুধ চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস, ভাজাভুজি, বিরিয়ানির মতো খাদ্য এড়িয়ে চলুন।
২. প্যাকেজড যে কোনও খাদ্য এমনকী প্যাকেটজাত বেভারেজও খাওয়া যাবে না।
৩. অতিরিক্ত মশলা দিয়ে তৈরি মাছ, মাংস, ডিমের ঝোল খাওয়া যাবে না। মোট কথা রান্নায় মশলার ব্যবহার অবশ্যই কমাতে হবে।
পরামর্শক : স্বাগতা মুখোপাধ্যায়। সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান, রুবি জেনারেল হাসপাতালের।