আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনী

ঘটণা- দুর্ঘটনা

সুবর্ণবাঙলা অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় চিনিকলের আগুন নেভেনি। সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগর এলাকার ওই চিনি কারখানার একটি গোডাউনে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ৪টা থেকে একে একে কর্ণফুলী মডেল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, লামা বাজার, আগ্রাবাদ, চন্দনপুরাসহ বিভিন্ন স্টেশনের ১৩টি ইউনিট কাজ করলেও রাত ১১টা পর্যন্ত আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। এবং রাতে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসারও কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনীর দল। এরই মধ্য ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, বিকেলে আগুন লাগার সময় কারখানাটি চালু ছিল। সেখানে প্রায় সাড়ে ৫০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। আগুন লাগার পর কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কারাখানা সূত্রে জানা যায়, কারখানায় মোট ৫টি গুদাম রয়েছে। প্রতিটি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার মেট্রিক টন। সুগার মিলের পাশে একটি গুদামে আগুন লাগে। চিনি পুড়ে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে।

কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজানে বাজারে সরবরাহ করতে পরিশোধনের জন্য কমবেশি এক লাখ মেট্রিক টন কাঁচামাল গুদামটিতে মজুদ করা ছিল। আগুনে প্রায় সব চিনি পুড়ে গেছে। কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন কারখানার কর্মকর্তারা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই প্রথমে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চিনি কারখানার গোডাউন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা চালান। আগুনের লেলিহান শিখায় আশেপাশে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এরমধ্যে ছিলেন গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সালও। তিনি বলেন, এস আলম সুগার মিলে আমদানি করা কাঁচামাল পরিশোধনের মাধ্যমে চিনি তৈরি করা হয়। মিলটিতে চার লাখ মেট্রিক টন ক্যাপাসিটি আছে। কারখানার ইউনিট-ওয়ানের গুদামে আগুন লেগেছে। সেখানে এক লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। সেগুলো সব পুড়ে গেছে। রমজানের জন্য চিনিগুলো আমদানি করা হয়েছিল। গোডাউন সংলগ্ন মুল কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে রমজানে আমাদের পক্ষে বাজারে চিনি সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হবে না।

এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক জানিয়েছেন, এস আলম সুগার মিলের গোডাউনে আগুন লাগে। সেখানে বিপুল পরিমাণ চিনি তৈরির কাঁচামাল মজুদ ছিল। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে, তা জানা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর কীভাবে আগুন লাগলো তা জানা যাবে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দীনমণি শর্মা বলেন, রাত ৮টার দিকে আগুনের তীব্রতা বাইরের দিকে কমে আসে। তখন থেকে কেবল গুদামের ভেতরে অপরিশোধিত চিনিগুলো পুড়ছিল।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জহরুল হক ঘাঁটির ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হাবীব বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি দল আগুন নেভাতে অংশ নিয়েছে। তাদের গাড়িতে ১০ হাজার লিটার পানি ধারণ করা যায় বলে জানানো হয়।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ৩টা ৫৫ মিনিটে তারা এস আলমের চিনির কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পায়। এরপর প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট কাজ শুরু করে। এরপর পর্যায়ক্রমে ১০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিস কর্ণফুলী নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি পানি ছিটাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাকিলা ফারজানা বলেন, আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করার। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এদিকে রাতে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *