অনলাইন ডেস্ক
বান্দরবান সদরে র্যাব কার্যালয়ে নেজাম উদ্দীনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে গেল মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে অপহরণ করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে র্যাবের মধ্যস্থতায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
পরে তাকে বান্দরবান সদরে র্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয় এবং রাতে সেখানেই অবস্থান করেন তিনি। শুক্রবার সকালে নেজাম উদ্দীনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
র্যাব বলছে, ব্যাংক ম্যানেজারকে চোখ বেঁধে টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ সময় তারা কলার পাতায় করে ম্যানেজারকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। কেএনএফ সদস্যরা সবসময় নিজেদের মধ্যে বম ভাষায় কথা বললেও ম্যানেজারের সঙ্গে তারা শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথাবার্তা বলেছে। সবসময় ২/৩ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ম্যানেজারকে ঘিরে রাখতো এবং ১২/১৩ জন তার আশপাশে অবস্থান করতো।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ম্যানেজারকে বের করে টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা কোনো এক পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার সঙ্গে ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল। পথে তারা ম্যানেজারের চোখের বাঁধন খুলে দেয় এবং অন্ধকারে চলার সুবিধার্থে ম্যানেজারের হাতে একটি বাটন ফোন ধরিয়ে দেয়। পথে তারা কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয়। এরপর আবার হাঁটা শুরু করে। একপর্যায়ে রাত আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের দিকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ম্যানেজারকে ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ম্যানেজার যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য তারা পাহারা দেয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, ঘটনার পরদিন ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাংক ম্যানেজারকে সামান্য নাস্তা দিয়ে আবারও হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ দিয়ে আরেক পাহাড়ের ঝিরিতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০/৩৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। এ সময় তারা কলার পাতায় করে ম্যানেজারকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। পরে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়।
পরে ম্যানেজারকে ১৫/২০ মিনিট বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা ধাপে ধাপে বিশ্রাম এবং হাঁটার পর ভিন্ন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছালে এ সময় তারা ম্যানেজারকে আবারও গরম ভাত, ডাল ও ডিম খেতে দেয়।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, রাত ৮টার দিকে সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে একটি টং ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে নুডলস খেতে দেয়, তবে ম্যানেজার খাননি। ওই রাতে টং ঘরে ম্যানেজারের সঙ্গে পাহারারত ৫ জন সন্ত্রাসী ঘুমায়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ৩ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৮টা থেকে পরদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেএনএফ সন্ত্রাসীরা প্রায় একই জায়গায় ছিল। এরপর বিকেল ৩টার পর প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটে তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে মোটরসাইকেলে করে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়। পাশাপাশি কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয় সে বিষয়ে ম্যানেজারের পরিবারকে সর্তক করা হয়। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় ওই সূত্র ধরে র্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে।
পরে র্যাবের মধ্যস্থতায় ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেলপাড়া মধ্যবর্তী কোনো এক স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়, যোগ করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক।