সুবর্ণবাঙলা প্রতিবেদন
সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়
সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাগন দীর্ঘদিন পদোন্নতি বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। তারা জানান বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচের অফিসার/সিনিয়র অফিসার পদে যোগদানকারী কর্মকর্তাদের (বর্তমানে এসপিও/এজিএম) মেধা, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা, প্রকৃত জ্যেষ্ঠতা ও সুদীর্ঘ ২৪, ২৬, ২৯ ও ৩০ বছর চাকরিকাল বিবেচনায় এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার/ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদানের ন্যায্যদাবীর পক্ষে এই স্মারক লিপি
উপর্যুক্ত বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৮.০৮.২০২৪ তারিখ, ০৫.০০.০০০০.১৩০.১২.০০১.২৩.৪০৮ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০১ জন কর্মকর্তাকে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে বলে তারা জানান। এবং প্রজ্ঞাপনের ৩নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, ৩। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ যে তারিখ থেকে ০৬.০০: ২০০৪, ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০-এ যোগদানকারীরা এজিএম/ডিজিএম হলেও ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০-এ যোগদানকারীদের অনেকেই এজিএম/ডিজিএম হতে পারেননি। বৈষম্যমূলক পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়নকরে তাদের পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা প্রয়োজন যে, ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত চাকরির বাজার অত্যন্ত সংকুচিত ছিল। ২০০৭/২০০৮ থেকে এ বাজার ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ২০০৪, ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০-এ যোগদানকারীদের চেয়ে ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০-এ যোগদানকারীদের অধিকতর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করতে হয়েছিল। তবুও, তারা পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার।
০৭.০০: রূপালী ব্যাংকের ১৯৯৮ ব্যাচ (অফিসার/সিনিয়র অফিসার) যখন জিএম/ডিএমডি/এমডি তখন সোনালী ব্যাংকের ঐ একই ব্যাচ এসপিও/এজিএম/ডিজিএম। সেদিক থেকে এ ব্যাংকের ১৯৯৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা বঞ্চিত/বৈষম্যের শিকার। ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০-এ যোগদানকারীদের মধ্যে যারা এখনও এসপিও/এজিএম তারা আবার বঞ্চিতদের মধ্যে বঞ্চিত। তাদের আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
০৮.০০: ৬/৭ বছর একই পদে ছিলেন এমন ৭ শতাধিক অফিসারকে সুপারনিউমেরারী হিসেবে সিনিয়র অফিসার করা হলো, ৫ বছর এসপিও পদে ছিলেন এমন ৫২ কর্মকর্তাকে (১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচের অফিসার) সুপারনিউমেরারী হিসেবে এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার করা হলো যখন তাদের চাকরির বয়স ২১/২৩ বছর, আড়াই বছরে জেনারেল ম্যানেজার করা হলো, সিপিএফ ধারীদের জিপিএফ-এ নেয়া হলো, অর্গানোগ্রাম করা হলো, ৫টি ইনসেনটিভ দেয়া হলো, এ সবই মৌলিক কাজ, ১২ বছর বা তদূর্ঘকাল একই পদে ছিলেন বা আছেন যারা ২৪, ২৬, ২৯ ও ৩০ বছর চাকরিকাল অতিক্রম করছেন এমন এসপিও/এজিএমদের মেধা, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও প্রকৃত জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার/ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেয়া যায়না? অবশ্যই যায়। বরং তারা হকদার।
০৯.০০: চাকরিতে সিনিয়রিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিনিয়রিটি গণনা শুরু হয় যোগদানের তারিখ থেকে। এটি বিরামহীনভাবে চলতে থাকে। পরে যোগদানকারী কর্মকর্তারা কখনও পূর্বে যোগদানকারী কর্মকর্তাদের উপর সিনিয়রিটি পেতে পারেনা। ক্যাডার সার্ভিস ও বাংলাদেশ ব্যাংকে এ রীতিই অনুসৃত হয়ে থাকে। বিশ্ব জুড়ে এটাই স্বীকৃত রীতি। কিন্তু এ ব্যাংকে ২০০৪-এ যোগদানকারী কম্পিউটার অপারেটর, সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর ও অন্যান্য ওঞ কর্মকর্তাদের ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচে যোগদানকারী অফিসার/সিনিয়র অফিসারদের উপর সিনিয়রিটি প্রদান করা হয়েছে, যা চাকরি বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচের অফিসার/সিনিয়র অফিসারদের প্রকৃত সিনিয়রিটি ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রকৃত সিনিয়রিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের ২/৩টি পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে বর্তমান জনবল অনুমোদিত জনবলের ২.২৫, ২.৫০ ও ১.৭৫ গুণ দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাংকে বৈষম্যের শিকার ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচের অফিসার/সিনিয়র অফিসারদের প্রাপ্য পদোন্নতি প্রদানের লক্ষ্যে সরকারের উক্ত পলিসি অনুসরন করতে হবে।
১০.০০: প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব কর্পোরেট সংস্কৃতি থাকে। এ ব্যাংকেরও একটি কর্পোরেট সংস্কৃতি রয়েছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ উক্ত কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সেদিক থেকে ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচে যোগদানকারীদের (বর্তমানে এসপিও/এজিএম) প্রকৃত সিনিয়রিটি প্রদানপূর্বক ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়া হলে তা উক্ত কর্পোরেট সংস্কৃতিকেই প্রতিফলিত করবে।
১১.০০ঃ সোনালী ব্যাংক পিএলসি-তে প্রদোন্নতির ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি প্রচলন আছে। বিভিন্ন প্রকার তদবির ও অর্থের বিনিময়ে মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর কারসাজি করে সিনিয়রদের সুপারসিড করে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেয়া হয়। এতে সিনিয়র ও মেধাবীরা বৈষম্যের শিকার হয়। এই পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল/সংস্কার করা দরকার।
বিষয়ঃ বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচে অফিসার/সিনিয়র অফিসার পদে যোগদানকারী কর্মকর্তাদের (বর্তমানে এসপিও/এজিএম) মেধা, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা, প্রকৃত জ্যেষ্ঠতা ও সুদীর্ঘ ২৪, ২৬, ২৯ ও ৩০ বছর চাকরিকাল বিবেচনায় এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার/ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান প্রসংগে।
১২.০০: সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর কেবল একটি পদ নয়, একটি প্রতিষ্ঠানও বটে। যে প্রতিষ্ঠানের উপর সংশ্লিষ্ট অফিসারদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ দায়িত্ব পালনে পিছপা হতে পারেনা। প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। ৫টি ইনসেনটিভ প্রদান চ্যালেঞ্জ নয় কি? আরেকটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন; ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০-এ যোগদানকারীদের ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি দিন, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দায়মুক্ত হবে। আপনাদের নাম সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। উক্ত পদোন্নতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কেবল নিম্নোক্ত বিষয়াদি আবশ্যিকভাবে বিবেচনায় নিতে হবেঃ
ক. সোনালী ব্যাংক পিএলসি-তে পদোন্নতি বাণিজ্য চিরতরে বন্ধের জন্য পদোন্নতির ক্ষেত্রে অযৌক্তিক প্রথা বাতিল করতে হবে। এবং
খ. বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও যে সমস্ত জুনিয়র কর্মকর্তা সিনিয়রদের সুপারসিড করেছেন তাদের উপর ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি কার্যকর ও আর্থিক সুবিধা প্রদান করার দাবি জানিয়েছেন।
পদোন্নতিতে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ব্যাংকের ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ২০০০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের (যোগদানকালীন অফিসার/সিনিয়র অফিসার, বর্তমানে এসপিও/এজিএম) মেধা, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা, প্রকৃত জ্যেষ্ঠতা ও সুদীর্ঘ ২৪, ২৬, ২৯ ও ৩০ বছর চাকরিকাল বিবেচনায় এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার/ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পদে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদানের জন্য আবেদন দাবি তুলে ধরেছেন।