সেলিম রায়হান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল দাবি করেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দুই মাস পর তারা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা) এখনও আমাদের হত্যার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে এই সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সাংগঠনিক কাঠামো যা ব্যবহার করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়, তা নিষিদ্ধ করতে হবে৷
মঙ্গলবার বেলা ১টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গণঅভ্যুত্থানে সৈনিক ছাত্র-জনতার ওপরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে সরকারের দীর্ঘসূত্রিতার প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে আরিফ সোহেল এ দাবি করেন।
সোমবার রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রবিউস সানী শিপুর ওপর হামলা চালায় ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান হিরুসহ দুজন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মেহরাব সিফাতের সঞ্চালনায় বক্তারা রবিউস সানী শিপুর ওপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান৷
এ ঘটনার বিচার দাবি করে আরিফ সোহেল বলেন, রবিউস সানী শিপু আন্দোলনের প্রথমসারির একজন নেতৃত্বদানকারী ছাত্র৷ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে প্রথম সারিতে থেকে গুলি খেয়েছেন৷ এখনো তার পেটে সেই গুলির দাগ রয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে তার অপারেশন হয়েছে৷ তার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা দুই মাস পরে তার ওপর আক্রমণের সাহস দেখিয়েছে৷ তার গুলিবিদ্ধ পেটে আঘাত করে রক্তপাত ঘটিয়েছে, যেটা সুস্পষ্ট হত্যা চেষ্টা৷
আমাদের দাবি, রবিউস সানী শিপুর উপর উপর আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের যথাযথ মামলা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷
এছাড়া সাভার আশুলিয়া অঞ্চল ও সারা দেশে আওয়ামী ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসী যারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছে, হামলা চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তপূর্বক গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷
মানববন্ধনে আরিফ সোহেল বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানকে রক্ষা করতে হলে গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী আহত এবং শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের ক্ষমতাশালী করতে হবে৷ জনগণের ক্ষমতা তাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হতে হবে৷ একমাত্র তারাই গণঅভ্যুত্থানকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে রক্ষা করবেন- যেটা আমরা জানি৷
মানববন্ধনে রবিউস সানী শিপুর মা নাদিয়া আফরোজ শিউলি বলেন, শিপু আমার একমাত্র ছেলে৷ সে দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজপথে গুলি খেয়েছে কিন্তু সে তার এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, এর বিনিময়ে সে কোনো যথাযথ সম্মান বা মর্যাদা পায়নি৷ আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এতদিন ধরে বাড়িতে ছিলাম। এক মাস পর গতকাল ঢাকায় নিয়ে এসেছি৷ আসার দুই ঘণ্টা পরেই তাকে হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা ঘটে৷ সরকারের কাছে আমার ছেলের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি৷ আমি আর কোথাও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কোনো কর্মকাণ্ড দেখতে চাই না৷