আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা: ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর!

জাতীয় ধর্ম ও দর্শন পরিবহণ-পর্যটন ও যোগাযোগ

সুবর্ণবাঙলা ডেস্ক

মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর এবার দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্যাপিত হবে এই ঈদ। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন। ঈদুল আজহার নামাজ ও পশু কোরবানির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী এবং মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বাণীতে তারা এ শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, কোরবানি আমাদের মাঝে সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে। আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারির অভিঘাত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নিম্ন আয়ের মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে দিনাতিপাত করছেন। তিনি সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি দেশের বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত হোক।
এদিকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ঈদুল আজহা শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। হজরত ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর এ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সচ্ছল মুসলমানগণ কোরবানিকৃত পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে মানুষে-মানুষে সহমর্মিতা ও সাম্যের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক।
পবিত্র ঈদুল আজহা সম্পর্কে কুরআনের সূরা কাউসারে বলা হয়েছে- তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড় এবং কোরবানি কর। সূরা হাজ্জে বলা হয়েছে- কোরবানি করার পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ।
এ সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক জাতির বাৎসরিক আনন্দ-স্ফুর্তির দিন আছে। এই দিনে ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে, একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে।
ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব। এবাার চারদিনের ছুটি শুরু হয়েছে মঙ্গলববার থেকেই। এবারের ঈদে কোরবানির গরু ও মসল্লার দাম বাড়তি হওয়ায় মাানুষের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মহাখালীর মসজিদে গাউছুল আজমে প্রতিবারের মতো এবারও চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল সাড়ে ৭টায়। এতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মো. নূরুল হক। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলনা কবি রুহুল আমীন খান। তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। এতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। সকাল সোয়া ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব ও ভূঁইঘর দারুসছুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. খালিদ ছাইফুল্লাহ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *