কাবেরী মৈত্রেয়,
কোরবানির ঈদ ঘিরে গতি ফিরেছে অর্থনীতিতে। পশু কেনাবেচা থেকে শুরু করে দা-বঁটি, চামড়া, পরিবহন, প্রবাসী আয়সহ নানা খাত থেকে নগদ টাকার সরবরাহ বেড়েছে প্রান্তিক পর্যায়েও। অনেক মানুষের জীবিকার সংস্থানও হয় এ উৎসবকে ঘিরে। বিশ্লেষকদের মতে, উৎসব কেন্দ্রীক এ অর্থনীতির আকার লাখ কোটি টাকার মতো। তাদের মতে, মানুষের সম্পৃক্ততা বিবেচনায় নিলেও ঈদ কেন্দ্রিক অর্থনীতির গুরুত্ব অনেক।
গরু, মহিষ কিংবা ছাগল বছরভর যতœআত্তি করে ভালোমন্দ খাইয়ে এই ঈদকে ঘিরে কোরবানির উদ্দেশে প্রস্তুত করেন দেশের লাখো প্রান্তিক খামারি।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, কোরবানির পশুর চাহিদা এক কোটি তিন লাখের ওপরে। এবার হাটগুলো পশুর দাম তুলনামূলক ভালো হওয়ায় এর বাজার ৫০ হাজার কোটি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে কোরবানির পশুকে ঘিরে এই সময় জমে উঠে পশুখাদ্য বাজার। সঙ্গে ছুরি, চাপাতি ও হাত কুড়ালের মতো পণ্যের বেচাকেনার বড় অংশ এ সময়েই হয়ে থাকে। ছুরি-চাপাতি কেনা কিংবা ধার শেষ হলে লেনদেন এগুতে থাতে রশি-পাটি-পলিথিন ও খাইট্টার বাজারগুলোতে।
অপরদিকে কোরবানির পর যে পশু চামড়া, তারও বাজার প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের যোগানে ব্যাংকগুলো এবার দিয়েছে ২৬০ কোটি টাকার ঋণ। আর সরকারও বেঁধে দিয়েছে চামড়ার নূন্যতম প্রতি বর্গফুটের দাম।
চামড়া কেন্দ্রীক অর্থ লেনদেনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে কোরবানির মাংসসহ অন্য মুখরোচক রান্নাকে ঘিরে বেচাকেনা বাড়ে মশলার। যার বাজার কমপক্ষে ছয় হাজার কোটি টাকা।
একই সঙ্গে কোরবানির মাংস সংরক্ষণে চাহিদা বাড়ে ফ্রিজের। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ঈদের এই সময়টায় ফ্রিজ বেচাকিনা বাড়ে কয়েকগুণ বেশি।
উৎসবের এই দিনগুলোতে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে ঘুরমুখো হয় বেশিরভাগ মানুষ। আর তাই তো যাতায়াতে লেনদেন ছাড়িয়ে গেছে এবার ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কেবল প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ মানানো নয়, হজ পালনেরও সৌদি আরবে যান যেসব মুসল্লী তাদের খরচ-খর্চ্চাতে সচল হয় অর্থনীতি, যার পরিমাণ নেহাৎ-ই ছয় হাজার কোটি টাকার কম নয়।
আর কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে বিদেশ থেকে টাকা পাঠান প্রবাসীরা। চলতি মাসের ২৩ দিনে এবার এসেছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া উৎসব কেন্দ্রীক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বোনাস , ভাতার মতো অর্থ প্রাপ্তি, লেনদেনের মাধ্যমে রসদ যুগিয়েছে গ্রামীণ আর শহুরে অর্থনীতিতে।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের এই সময়ে কোরবানির ঈদকে ঘিরে এই আর্থিক লেনদেন বেশ সন্তোষজনক। তার মতে এই লেনদেন প্রায় লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে।
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী দেশে বৈষম্য বাড়লেও, যে শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে তা কোরবানি অর্থনীতিকে সচল রাখছে। যার সুফল পাবে নিম্নআয়ের মানুষও।
(সৌজন্যে: একাত্তুর টিভি)